মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বাকরুদ্ধ তিন মেয়ে
প্রকাশকালঃ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:৩৯ অপরাহ্ণ ২১২ বার পঠিত
এক দিন আগে মারা গেছেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের স্ত্রী প্রিয়া রহমান। নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না তাঁর। গত মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইলে স্ত্রীকে দাফন করে গতকাল বুধবার সকালেই তিনি ফিরে আসেন। জীবনসঙ্গী প্রিয়া রহমানের শোকে কাতর ছিলেন সোহান, শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না। গত বুধবার সন্ধ্যায় উত্তরার বাসায় ঘুমের মধ্যে মারা যান ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার এই পরিচালক। মেয়েরা টাঙ্গাইলেই ছিলেন। কিন্তু বুধবার হঠাৎ বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আবার ঢাকার দিকে রওনা করেন তাঁরা। বুধবার রাতেই বাবার মরদেহ নিয়ে যাত্রা করেন নানাবাড়ির উদ্দেশে।
২৪ ঘণ্টার কম সময়ের ব্যবধানে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় একই কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে পরিচালক সোহানকে। বগুড়ায় জন্ম নেওয়া সোহানের শ্বশুরবাড়ি টাঙ্গাইলে। স্ত্রীর কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করার ইচ্ছা পোষণ করে গেছেন সোহান। বুধবার মধ্যরাতে সোহানের মরদেহ টাঙ্গাইলের রেজিস্ট্রিপাড়ার শ্বশুরবাড়িতে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড মসজিদে জানাজা শেষে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে তাঁকে।
এর আগে উত্তরার বাসায় তাঁর প্রথম জানাজা হয়েছে। সোহানের মৃত্যুর খবরে চিত্রনায়ক শাকিব খান, রিয়াজ, ফেরদৌস, নিপুণসহ ঢাকাই সিনেমার পরিচালক ও শিল্পীরা তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে যান। এ সময় শিল্পীরা বলেন, সোহান ভাই শুধু ভালো নির্মাতা ছিলেন তা নয়, ভালো মানুষও ছিলেন। তাঁর মতো অমায়িক মানুষ চলচ্চিত্রাঙ্গনে কম। তাঁর তিনটি মেয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে মা–বাবা দুজনকেই হারিয়েছেন। এ শোক কীভাবে সইবেন তাঁরা!
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিপুণ বলেন, ‘সোহান ভাইয়ের স্ত্রী গতকাল মারা যান। স্ত্রী বিয়োগের শোক তিনি নিতে পারেননি। তিনিও চলে গেলেন। বিশ্বাস করেন, সোহান ভাইয়ের এভাবে চলে যাওয়া আমারও বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই খবরটি শুনেই দ্রুত উত্তরায় ছুটে আসি। জানি না, ওনার মেয়ে তিনটি এই শোক কীভাবে সইবে।’ চিত্রনায়িকা জেসমিন বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে বাকরুদ্ধ সোহান ভাইয়ের তিন মেয়ে। ওদের কান্না থামছে না। সবাই দোয়া করবেন, আমাদের প্রিয় সোহান ভাইয়ের তিন মেয়েকে শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি যেন দেন আল্লাহ। আসলে আমরাও বুঝতে পারছি না, কী বলে ওদের সান্ত্বনা দেব।’
পরিচালক কাজী হায়াৎ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বলেন, ‘গত বুধবার আমার সঙ্গে সোহানের কথা হয়েছে। সে আমাকে কান্নাকাটি করে বলল, “হায়াৎ ভাই, আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন আমি স্ত্রী হারানোর শোক সইতে পারি। আল্লাহ যেন আমাকে ধৈর্য দেন।” আমি মনে করি, সোহান ভাগ্যবান যে স্ত্রীর শোক খুব বেশি সময় ধরে তাকে সইতে হয়নি। সব ছিন্ন করে সেও চলে গেল।’
কাজী হায়াৎ বলেন, ব্যক্তিজীবনেও দারুণ রোমান্টিক মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর মতে, মানুষ হিসেবে রোমান্টিক হওয়ার কারণেই হয়তো রোমান্টিক ছবির প্রতি তাঁর (সোহান) আলাদা ঝোঁক ছিল।
গুরুতুল্য নির্মাতার মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হলেন নায়ক শাকিব খান। আবেগপ্রবণ কণ্ঠে জানালেন স্মৃতি থেকে তুলে আনা কিছু কথা। অকপটে স্বীকার করলেন, মাসুদ রানা পাল্টে শাকিব খান নামটি তাঁকে দিয়েছেন এই সোহানুর রহমান সোহান। শাকিব খান বলেন, ‘আমার এই শাকিব খান নামটি সোহান ভাইয়েরই দেওয়া। সত্যি কথা বলতে, তাঁর সম্পর্কে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই তো কয়েক দিন আগেও সোহান ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, অসুস্থ। উন্নত চিকিৎসা নিতে জাপান যাবেন। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ করে খবরটি পেয়ে আঁতকে উঠলাম। জানলাম, ভাবির মৃত্যুর এক দিন পরেই সোহান ভাইও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। আহারে জীবন। ভাবি ও সোহান ভাইকে মহান আল্লাহ পরপারে শান্তিতে রাখুন। এটাই কামনা করছি।’
সত্তরের দশকের শেষ ভাগে নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে ঢালিউডে আসেন সোহানুর রহমান। ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ সিনেমা দিয়ে পরিচালনায় নাম লেখান। ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ নির্মাণ করে খ্যাতি পান। চার দশকের ক্যারিয়ারে রোমান্টিক সিনেমা নির্মাণ করে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। অনন্ত ভালোবাসা’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘সে আমার মন কেড়েছে’সহ বহু সিনেমা নির্মাণ করেছেন সোহান। ১৯৫৯ সালের ১৫ অক্টোবর বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন সোহানুর রহমান। বগুড়া ও জয়পুরহাটে স্কুল ও কলেজজীবন শেষে ঢাকায় আসেন তিনি।