রাজনৈতিক কারণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম কি পরিত্যক্ত হতে পারে?

প্রকাশকালঃ ৩০ আগu ২০২৩ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ ২১০ বার পঠিত
রাজনৈতিক কারণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম কি পরিত্যক্ত হতে পারে?

ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা রাজনৈতিক কারণে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম কি পরিত্যক্ত হতে পারে? সরকার পরিবর্তন হলে কী হবে? এমন সব প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান আশ্বস্ত করে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ করার কিছু নেই।

কবিরুল ইজদানী বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আক্রোশে পেনশন স্কিম পরিত্যক্ত হবে না। সরকার পরিবর্তন, সরকারের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সরকারের উন্নয়ন একটি প্রেক্ষিত। আরেকটি প্রেক্ষিত হচ্ছে জনগণ কী চায়। জনগণ তার আয়ের নিশ্চয়তা চায়। পেনশন কর্মসূচির বড় বিষয় হচ্ছে আস্থা। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছেন; কেউ বাধ্য করছে না। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এটি চালু করেছে।’

পেনশন স্কিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যাঁরা পেনশনের চাঁদা জমা দিচ্ছেন, সেটি তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা হচ্ছে। সেই অর্থ পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো জমাকৃত অর্থ সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করে মুনাফাসহ আপনাকে দিতে হবে।’


রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকার (এমসিসিআই) মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সর্বজনীন পেনশন নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি সায়ফুল ইসলাম। বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।

১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামের চারটি আলাদা পেনশন কর্মসূচি চালু হয়েছে। ১৮ বছরের বেশি বয়সী যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক ৬০ বছর বয়সে না পৌঁছানো পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করে অবসরজীবনের সময় পেনশন–সুবিধা পেতে সর্বজনীন পেনশন–ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

এ ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও যেকোনো ধরনের পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। পেনশন-ব্যবস্থা পরিচালনা ও বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা অর্থ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।


মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কবিরুল ইজদানী খান বলেন, পেনশন হচ্ছে সুরক্ষা, এটি সম্পত্তি নয়। পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বর্তমানের আয় থেকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা করলে অবসরকালে ভাতা পাওয়া যাবে, যা বৃদ্ধ বয়সের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ফলে জমিজমা কিংবা অন্য কোনো সম্পদের সঙ্গে এর তুলনা করা ঠিক হবে না।

কবিরুল ইজদানী বলেন, পেনশনের অর্থের হেফাজতকারী হচ্ছে সরকার। তবে চাঁদাদাতার নামেই অর্থ জমা হবে। পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জমার চেয়ে পাবেন বেশি। এই হিসাব-নিকাশে মূল্যস্ফীতিও আছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে সঞ্চয়ের অনেক পণ্য আছে। যেটি ভালো সেটি গ্রহণ করবেন। পেনশন কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি থাকলে তুলে ধরবেন। আমরা এটিকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে চাই।’

স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআইয়ের সভাপতি সায়ফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের জন্য ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি চালু আছে। তাঁরা চাইলে এসবের পাশাপাশি পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সরকার এখানে জিম্মাদার হিসেবে রয়েছে। অনেক কোম্পানিতে ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পাওয়া নিয়ে অবিশ্বাস আছে। এ ক্ষেত্রে সর্বজনীন পেনশন অনন্য। কারণ, এটির দায়দায়িত্ব সরকারের।


সায়ফুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয়পত্রে টাকা রেখে ফেরত পায়নি এমন কথা কেউ বলতে পারবে না। পেনশনের টাকা নিয়েও কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এতে অনির্ধারিত আলোচনায় সর্বজনীন পেনশন নিয়ে জনগণ যাতে কোনো অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়, সেদিকে নজরদারি রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে। কিন্তু অনেকেই ঐতিহাসিক এ উদ্যোগের বিপক্ষে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাই প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত তথ্য, সরকার কী করেছে, কী করতে যাচ্ছে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবে—এ ব্যাপারগুলো জনগণের কাছে উপস্থাপন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারের বিভিন্নজন যেখানে যাঁরা কথা বলবেন, তাঁরা এটি জানাবেন, কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর দেবেন, তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।