টিনএজ বা কিশোর বয়সে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় কম। করোনা মহামারির পর আমাদের জীবন-যাপনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তনের ফলে নানা শারীরিক সমস্যাও বেড়েছে। খাবারে অনিয়ম, ফাস্টফুডে আসক্তি, দৈনন্দিন জীবনে নিয়ম না মানা এসব নানা কারণে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের পাশাপাশি ওজনও বাড়ে। এ বিষয়ে কিছু বিস্তারিত আলোচনা করছেন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা মো. দেলোয়ার হোসেন।
কিশোরদের ডায়াবেটিসের আরও কিছু সমস্যা
ওজন কমানোর জন্য অনেক টিনএজার ক্র্যাশ ডায়েট করে। বা হয়তো একদম কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে দেয় খাবার থেকে। মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্কের কাজের জন্যও গ্লুকোজ়ের প্রয়োজন। সেই গ্লুকোজ় খাবারের মাধ্যমে শরীরে না পৌঁছালে হঠাৎ করে সুগার ফল করতে পারে। রিপিটেড হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে, শরীর ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে। ফলে, ডায়াবেটিসের প্রবণতা আরও বাড়ে। আবার স্ট্রেসের ফলে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয় বেশি, ইনসুলিন নিঃসরণ কমে। ঘুমের সময়ে হ্যাপি হরমোন রিলিজ় হয়। স্ট্রেসের ফলে ঘুম কম হয়, ফলে সুগার মেটাবলাইজ়ড হয় না। রক্তে শর্করা জমতে থাকলে ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে। মনে রাখা প্রয়োজন, টিনএজারদের সাধারণত টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হলেও (শরীরে এক্ষেত্রে ইনসুলিন তৈরি হয় না) কিছু ক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবেটিসও হতে পারে। অর্থাৎ, কারও শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও তা যথাযথ কাজ করে না। এই দু’ক্ষেত্রে ওষুধ আর ডায়েট, আলাদা আলাদা হয়।
ডায়াবেটিসের ধরন বুঝে খাওয়া-দাওয়া
*কিশোর বয়সে ডায়াবেটিস হলে ডায়াবেটিসের ধরণ বুঝে খাদ্যাভ্যাসে বদল আনতে হবে। ফাস্টফুডের বিকল্প অবশ্যই খুঁজে নিতে হবে। পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব না হলেও, একদম খালি পেটে জাঙ্ক ফুড না খাওয়াই ভালো।
*ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সারাদিনের নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণের একটি মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। সারাদিনের খাবারে ক্যালরি সেই অনুপাতেই ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে।
*ইমার্জেন্সি সুগার ফল করার আশঙ্কা থাকলে সঙ্গে ক্যান্ডি, গ্লুকোজ় ওয়াটার ক্যারি করা ভাল। তবে সিভিয়ার ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। টিনএজ মেয়েদের, যাদের হেভি ব্লিডিং হয়, তারা যদি কড়া ডায়েটে থাকে তাহলে এই দুয়ে মিলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অনেকটা কমে যেতে পারে। এদের টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস থাকলে, জটিলতা বাড়তে পারে। কিডনি বা কার্ডিয়াক সমস্যা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে হাই প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হতে পারে।
*টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অনেকের হয়তো ফাস্টিংয়ে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে। এদের ক্ষেত্রে রাতে ঈষদুষ্ণ গরম দুধে দু’তিনটে কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়মিত অভ্যাস গড়ে নেওয়া ভালো। আবার পিপি বেশি থাকলে, সকালের মাঝামাঝি কোনো সময়ে যেকোনো একটি ফল ও প্রোটিন খাওয়া ভালো। গোটা ফল, টক দই খাওয়ার দেড়-দু’ঘণ্টা পরে দুপুরের খাবার খেতে মানা নেই।
*যেহেতু টিনেজার তাই অনেক সময় অনেকের ফাস্টিং ও পিপি, দুই-ই নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিসের লক্ষণ তাদের মধ্যে পাওয়া যায়। তখন এইচবিএওয়ানসি (HbA1c) টেস্টে হয়তো ধরা পড়ল সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত। তাদেরকে নিয়মিত মনিটর করা প্রয়োজন। টাইপ ওয়ান বা টু, দু’ধরনের ডায়াবেটিসেই সিম্পল কার্বোহাইড্রেট (চিনি, মিষ্টি) একদম না। বিস্কিট ও মুড়ি এড়িয়ে চলা ভালো।
*ছোট ছোট ফ্রিকোয়েন্ট মিল উপকারী, আর প্রতিটি মিলেই অন্তত একটি প্রোটিন আইটেম যেন থাকে। অর্থাৎ, সারাদিনে যদি ৫০ গ্রাম প্রোটিন থাকে, তা যেন চারটি মিলে ভাগ করা থাকে। সিডস ও নাটস সুগারের মাত্রা ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
*এখন ইয়ং অ্যাডাল্টদের মধ্যেও হার্টের অসুখের উদাহরণ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে সুগার ফ্লাকচুয়েশন। ডার্ক চকোলেটও ভাল। এর সঙ্গে অবশ্যই প্রয়োজন অ্যাক্টিভিটি। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমে হরমোনাল ইমব্যালেন্স অনেকাংশে দূর করা যায়।