ঢাকা প্রেস নিউজ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রবর্তিত ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’ এখন দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি নীতি-নির্ধারকরা বিশ্বাস করেন, এই তত্ত্বের কার্যকর প্রয়োগ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে।
ড. ইউনূসের এই তত্ত্ব তিনটি মূল লক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:
(১) জিরো দারিদ্র্য
(২) জিরো বেকারত্ব
(৩) জিরো নেট কার্বন নিঃসরণ
তত্ত্বটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি সমন্বিত মডেল, যেখানে তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন, এবং সামাজিক ব্যবসার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ড. ইউনূস মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দারিদ্র্যের সৃষ্টি করে এবং এটি দূর করতে হলে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। তাঁর ভাষায়, “আমরা জন্মেছি সমস্যা সমাধানের জন্য, চাকরির জন্য নয়। তরুণদের উদ্যোক্তা হয়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে।”
এসডিজি কার্যক্রমের সঙ্গে থ্রি জিরো তত্ত্বের সংযোগ তৈরিতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কর্মশালা চলছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, “এই তত্ত্ব নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য। এটি কারও ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না, বরং যার ভালো লাগবে, তিনি গ্রহণ করবেন।”
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে ড. ইউনূস থ্রি জিরো তত্ত্ব উপস্থাপন করে বলেছেন, “এটি নতুন সভ্যতার সূচনা করবে, যা সবার জন্য বাসযোগ্য এবং নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলবে।”
ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো ক্লাব’ উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মকে থ্রি জিরো তত্ত্বে উদ্বুদ্ধ করার একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৪,৬০০টি থ্রি জিরো ক্লাব রয়েছে, যদিও বাংলাদেশে এর সংখ্যা তুলনামূলক কম। শেখ হাসিনার সরকারের সময় এই ক্লাব প্রতিষ্ঠায় প্রতিকূলতা থাকলেও এখন পরিবেশ বদলেছে। ক্লাবের সদস্যরা নিজেদের ‘থ্রি জিরো পারসন’ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন।
ড. ইউনূসের মতে, সামাজিক ব্যবসা টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এই ব্যবসায় মুনাফা জনকল্যাণে ব্যয় হয়, যা দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক। লামিয়া মোরশেদ বলেন, “মাইক্রোক্রেডিটের পর সামাজিক ব্যবসা ড. ইউনূসের নতুন প্রোগ্রাম, যা উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
কমনওয়েলথ সচিবালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. এম এ রাজ্জাক মনে করেন, থ্রি জিরো তত্ত্ব তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে একটি নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে। তিনি বলেন, “এই তত্ত্ব কার্যকর হলে দেশে উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।”
আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য যুব সম্মেলনে থ্রি জিরো তত্ত্বকে একটি বিশেষ বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হবে। পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে এই তত্ত্বকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার লক্ষ্যে সরকার এবং বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।