ছবি বানালেন হুইলচেয়ারে বসেই সালাহউদ্দিন জাকী

প্রকাশকালঃ ১৪ জুন ২০২৩ ০৪:৩০ অপরাহ্ণ ১৮৯ বার পঠিত
ছবি বানালেন হুইলচেয়ারে বসেই সালাহউদ্দিন জাকী

খন আর ইচ্ছেমতো ছোটাছুটি করতে পারেন না তিনি। মন চাইলে যখন-তখন শুটিংয়েও যেতে পারেন না। তারপরও তাঁকে দমানো যায়নি। হুইলচেয়ারে বসেই ক্যারিয়ারের ৭ নম্বর চলচ্চিত্রটি বানিয়েছেন ‘ঘুড্ডি’খ্যাত নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। ‘অপরাজেয় একা’ নামের ছবিটি এখন মুক্তির প্রহর গুনছে।

আশির দশকে ‘ঘুড্ডি’ ছবিটি যে উদ্যম নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন, এখনো সেভাবেই সব সিনেমার শুটিং করেন জাকী। কাজের জায়গায় কোনো বাধাই তাঁকে কাবু করতে পারে না। বয়সের প্রসঙ্গ আসতেই ৭৯ বছরে পা দিতে যাওয়া এই নির্মাতা গত সোমবার ফোনের ওপাশ থেকে হেসে বললেন, ‘বয়স শুধু একটা অজুহাত। এই অজুহাত দেখিয়ে বসে থাকার মানুষ আমি নই। যত দিন বেঁচে থাকব, সিনেমা করে যাব।’

শারীরিক কারণে বজ্রপাতের সময় বাইরে থাকতে পারেন না। তাই সাঁতার কাটা, নদী বা মাঠে যাওয়া তাঁর বারণ। তারপরও সালাহউদ্দিন জাকীর সিনেমার গল্পে রয়েছে মাঝনদীর দৃশ্য। বৃষ্টির মধ্যে শুটিং। ছবিতে এসব দৃশ্য আছে জেনে সহকর্মী ও অভিনয়শিল্পীরাই তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য বাদ দিতে। কিন্তু তিনি উল্টো যুক্তি দাঁড় করান, বলেন, একজন শিল্পীকে বাধা পেরোতে হয়।


সালাহউদ্দিন জাকী বলেন, ‘আমি সিনেমা বানাতে ভালোবাসি। এটাই আমার পেশা। একই সঙ্গে সিনেমা আমার নেশাও। এই ভালোবাসা না থাকলে শিল্প, নান্দনিকতা হারিয়ে যায়। আমি তো চাইলে ঘরে বসে চিত্রনাট্য লিখতে পারি। সেগুলো অন্যকে দিয়ে শুটিং করিয়ে নিতে পারি। সেখানে আমার নাম থাকবে। পর্দায় আমার নাম দেখা যাবে। কিন্তু সৃজনশীল কাজ কি এভাবে হয়?’

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগরের ‘একা’ নামের একটি গল্প অবলম্বনে বানানো হয়েছে ‘অপরাজেয় একা’। ইমপ্রেম টেলিফিল্ম প্রযোজিত এই ছবির গল্পে উঠে এসেছে মাতৃত্বের অধিকার নিয়ে মিতি নামের এক নারীর সংগ্রাম। গল্পটা এমন, সারেং পিতার স্বপ্ন ছিল, একমাত্র পুত্রসন্তান সাগরের নাবিক হবে, যেটা তিনি নিজে হতে পারেননি। শখ করেই ছেলের নাম রেখেছেন সিন্দাবাদ। একসময় জাহাজমালিকের কন্যা মিতির সঙ্গে সিন্দাবাদের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।


সিন্দাবাদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন। মিতি চরিত্রে দীপা খন্দকার। সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী জানালেন, মিতি চরিত্রের জন্য তাঁর প্রথম পছন্দ ছিল সুবর্ণা মুস্তাফা। প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সুবর্ণা শুনেই বলল, “সিনেমায় মানুষ সেই ঘুড্ডিকেই খুঁজবে।” করা ঠিক হবে কি না, সেটা আমার ওপর ছেড়ে দিল। তা ছাড়া সে তো এখন অনেক ব্যস্ত। পরে দীপাকেই মনে হলো চরিত্রের সঙ্গে যায়। সেভাবেই চরিত্রটি নিয়ে এগিয়েছি।’

আফজাল হোসেন ও সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী—দুজনের পাঁচ দশকের পরিচয়। একসঙ্গে বেশ কয়েকটি কাজ করেছেন তাঁরা। যে কারণে দুজনের কাজের বোঝাপড়া বেশ ভালো। এই পরিচালক বলেন, ‘আফজাল এমন একজন অভিনেতা, যাকে সিনেমার শুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যদি বলি, কয়েকটা দৃশ্য রিশুট করা দরকার, সঙ্গে সঙ্গে সময় বের করে দেবে। এত বড় তারকা হওয়ার পরও তার মধ্যে কোনো অজুহাত নেই। কোনো সমস্যা থাকলেও শুটিং করে দেয়। ওর মতো অভিনেতাকে আমাদের আরও ভালোভাবে ব্যবহার করা দরকার ছিল।’


পরিচালক এ–ও জানিয়ে রাখলেন, সিন্দাবাদ চরিত্রের জন্য তিনি রাইসুল ইসলাম আসাদের কথাও ভেবেছিলেন। তিনি এখন কিছুটা অসুস্থ। তাই আর সম্ভব হয়নি।

‘অপরাজেয় একা’ চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ। এ বছরই ছবিটি মুক্তি দেওয়ার কথা ভেবেছেন পরিচালক। তিনি জানালেন, সিনেমার সংলাপ, শুটিং ও শুটিং–পরবর্তী কাজে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেছেন ফোয়াদ নাসের বাবু। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লীনু বিল্লাহ, কনা, কোনাল, শাহীন খান প্রমুখ। ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ, ঝিলিক, জান্নাত প্রমুখ।