বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি

প্রকাশকালঃ ২৬ জুলাই ২০২৩ ০৫:৫২ অপরাহ্ণ ২১০ বার পঠিত
বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি

বাংলাদেশবিষয়ক ঋণমান আভাস বা রেটিং আউটলুক কমিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। তাদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এত দিন ছিল স্থিতিশীল, কিন্তু এখন তারা তা কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য ‘নেতিবাচক’ ঋণমান নির্ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে দেশের সার্বভৌম ঋণমান দীর্ঘ মেয়াদে ‘বিবি মাইনাস’ ও স্বল্প মেয়াদে ‘বি’ নিশ্চিত করেছে তারা।

কিছুদিন আগে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়েছিল মুডিস ইনভেস্টর সার্ভিস। এবার ঋণমানের আভাস কমাল এসঅ্যান্ডপি। ঋণমান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে তিন প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে ‘বিগ-থ্রি’ বলা হয়। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানই ঋণমান কমানোর কথা বলল। ফিচ রেটিংস চলতি বছরের এখন পর্যন্ত কিছু প্রকাশ করেনি।


বিদেশি মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের যে অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা আছে, তার অবস্থা আগামী বছর আরও খারাপ হতে পারে; সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে আছে—মূলত এ দুই কারণে বাংলাদেশবিষয়ক পূর্বাভাস হ্রাস করেছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল।

এসঅ্যান্ডপি বলছে, ডলার-সংকটের কারণে বাংলাদেশ সরকার আমদানি করা জ্বালানির মূল্য পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যায়। দেশের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। সে কারণে এই সময় দেশের ডলার মজুত এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।

অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি বাংলাদেশবিষয়ক প্রতিবেদনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও মন্তব্য করেছে এসঅ্যান্ডপি। তারা বলেছে, দেশের রাজনীতিতে মেরুকরণ অত্যন্ত তীব্র। সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ খুবই কম। ফলে এখানে ক্ষমতার ভারসাম্য কম, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হাতেই সিংহভাগ ক্ষমতা। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। এই পরিস্থিতিতে নীতিগত ধারাবাহিকতা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন হবে।


ঋণমানের আভাস পরিবর্তনের কারণ
ঋণমানের আভাস পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে এসঅ্যান্ডপি বলেছে, দেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাত ধারাবাহিক চাপের মুখে আছে, বিশেষ করে বিদেশি মুদার রিজার্ভ হ্রাসের কারণে তা ঘটেছে। গত এক বছরে বাংলাদেশের বহিস্থ আর্থিক সম্পদ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ, পোর্টফোলিও বিনিয়োগ, অন্যান্য বিনিয়োগ ও ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভ ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের যোগফল কমেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি ও চলতি হিসাবের ঘাটতি কমা সত্ত্বেও বহিস্থ আর্থিক সম্পদ কমেছে।

তবে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তি দেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাতের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি ছিল। ১৮ মাস ধরে দেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাতের অবস্থা কেবল খারাপ হয়েছে; সেই সঙ্গে দেশে যত অর্থ আসছে, তার চেয়ে চলে যাচ্ছে বেশি।

বাংলাদেশের মানুষের স্বল্প মাথাপিছু আয় ও সরকারের রাজস্ব সক্ষমতা সীমিত হওয়ার কারণে এসঅ্যান্ডপির ঋণমানে প্রভাব পড়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে; সেই সঙ্গে আছে ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ। এ ছাড়া বিদ্যমান প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিন্যাসও ঋণমান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এত কিছু সত্ত্বেও বাংলাদেশ উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এর কারণ হিসেবে এসঅ্যান্ডপি বলছে, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে প্রকৃত অর্থেই ভালো সম্পর্ক, প্রবাসীদের পাঠানো বিপুল পরিমাণ অর্থ, বৈশ্বিক পরিসরে প্রতিযোগিতামূলক তৈরি পোশাক খাত। তবে এ ধরনের কাঠামোগত সহায়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির বহিস্থ খাতের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে; অর্থাৎ বাংলাদেশের আর্থিক দায় মেটানোর সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।


দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে বলা হয়েছে, দুই বছরের উচ্চ প্রবৃদ্ধির পর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে আসছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও তা মোকাবিলায় সুদের হার বাড়ানো ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের প্রভাব এখনো অনুভূত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির হারও কম।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মনে করছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে, অথচ তার আগের অর্থবছরেই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ। উল্লিখিত কারণে অভ্যন্তরীণ ভোগ হ্রাসের পাশাপাশি বিনিয়োগও কমে এসেছে।

অন্যদিকে বৈশ্বিক চাহিদাও চলতি ২০২৩ সালের বাকি সময় তেমন একটা বাড়বে না। তবে ২০২৪ সাল থেকে তা কিছুটা বাড়তে পারে। টাকার দরপতন ও দেশের বাজারে উচ্চ পণ্যমূল্যের কারণে দেশের বাজারেও চাহিদা বাড়বে না।