কাজা রোজা আগে, নাকি ছয় রোজা

প্রকাশকালঃ ০৮ মে ২০২৩ ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ ৩৬৫ বার পঠিত
কাজা রোজা আগে, নাকি ছয় রোজা

শাওয়াল মাসের অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল হলো শাওয়ালের ছয় রোজা। নবীজি (সা.) নিজেও এই রোজা রাখতেন এবং অন্যদের এই রোজা রাখার প্রতি তাগিদ দিতেন। কেননা পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসে আরো ছয়টি রোজা রাখলে গোটা বছর রোজা রাখার ফজিলত পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল অতঃপর এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)

শাওয়ালের ছয় রোজা নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু প্রশ্ন রয়েছে, নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর তুলে ধরা হলো—

শাওয়ালের রোজা কি শুধু নারীদের জন্য : অনেকে মনে করেন শাওয়ালের রোজা শুধু নারীদের জন্য, যেহেতু রমজানে তাদের ঋতুস্রাব শুরু হলে তাদের কিছু রোজা কাজা হয়ে যায়। এটা ভুল ধারণা। শাওয়ালের রোজা নারী-পুরুষ উভয়ের রাখার সুযোগ রয়েছে। এটা শুধু নারীদের জন্য নয় এবং কাজা রোজা আর শাওয়ালের রোজা এক নয়।


শাওয়ালের রোজা আর কাজা রোজা কি একসঙ্গে এক নিয়তে রাখা যায় : রমজান মাসের কাজা রোজার সঙ্গে শাওয়ালের নফল ছয় রোজা একই নিয়তে পালন করা যায় না। অতএব কাজা রোজার সঙ্গে একই নিয়তে রাখলে শাওয়ালের ছয় রোজা আদায় হবে না। বরং তা রমজানের কাজা রোজা হিসেবেই আদায় হবে। (হিন্দিয়া : ১/১৯৭, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৯৫, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৭৬)

কাজা আগে, নাকি ছয় রোজা আগে : হাদিসের ভাষ্য দ্বারা বোঝা যায় যে যারা পূর্ণ রমজান রোজা রেখে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে, তারা গোটা বছর রোজা রাখার ফজিলত পাবে। যে ব্যক্তির রমজানের রোজা কাজা আছে, সে তো পূর্ণ রমজান মাস রোজা রাখেনি। রমজান মাসের কিছুদিন রোজা রেখেছে। তাই তার উচিত আগে কাজা রোজাগুলো রেখে রমজান পূর্ণ করা। তারপর শাওয়ালের নফল ছয় রোজা রাখা।


এ ব্যাপারে ইন্টারনেটে শায়খ উছাইমিনের একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। একবার তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোনো নারীর যদি রমজানের রোজা কাজা থেকে যায়, তাহলে তার জন্য কি রমজানের রোজার কাজার আগে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা জায়েজ হবে; নাকি শাওয়ালের ছয় রোজার আগে রমজানের কাজা রোজা রাখতে হবে? জবাবে তিনি বলেন—যদি কোনো নারীর ওপর রমজানের কাজা রোজা থাকে তাহলে তিনি কাজা রোজা পালনের আগে ছয় রোজা রাখবেন না। কেননা নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে রোজা রাখল এবং এ রোজার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল সে যেন গোটা বছর রোজা রাখল।’ (প্রাগুক্ত)

যার ওপর কাজা রয়ে গেছে সে তো রমজানের রোজা পূর্ণ করেনি। সুতরাং সে কাজা আদায়ের আগে এই রোজা পালনের সওয়াব পাবে না। যদি ধরে নেওয়া হয় যে, কাজা রোজা পালন করতে গোটা মাস লেগে যাবে (যেমন—কোনো নারী যদি নিফাসগ্রস্ত হন এবং তিনি গোটা রমজানে এক দিনও রোজা রাখতে না পারেন, শাওয়াল মাসে তিনি রমজানের কাজা রোজা রাখা শুরু করেন, কিন্তু কাজা রোজা শেষ করতে করতে জিলকদ মাস শুরু হয়ে যায়) তাহলে তিনি জিলকদ মাসে ছয় রোজা রাখবেন। এতে করে তিনি শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখার সওয়াব পাবেন। কেননা তিনি বাধ্য হয়ে এই বিলম্ব করেছেন (যেহেতু শাওয়াল মাসে তার পক্ষে রোজা রাখা সম্ভবপর ছিল না)। তাই তিনি সওয়াব পাবেন। (ফতোয়া সমগ্র ১৯/২০, দেখুন ফতোয়া নং-৪০৮২ ও ৭৮৬৩)

এমনিভাবে যে ব্যক্তি বিশেষ কোনো (শরিয়ত সমর্থিত) ওজরের কারণে রমজানের রোজা ভেঙেছে, সেটা কাজা করা তার দায়িত্বে ফরজ। রমজানের রোজা ইসলামের পঞ্চ বুনিয়াদের অন্যতম। তাই এই ইবাদত পালন প্রাধান্য পাবে এবং ফরজের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়াকে অন্য মুস্তাহাব আমলের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।