কুড়িগ্রামে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১২

প্রকাশকালঃ ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ০২:৩৩ অপরাহ্ণ ০ বার পঠিত
কুড়িগ্রামে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১২

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) উপজেলা শহরের কলেজ মোড় এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
 


কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা সমর্থিত উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল হক শাহিন শিকদার সমর্থিত পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
 


সংঘর্ষের ঘটনার ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করায় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সাময়িক সুরাহা হয় বলে জানা গেছে।
 


বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকালে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সাইফুর রহমান রানা সমর্থিত গ্রুপের নেতাকর্মীরা শাহিন শিকদার সমর্থিক কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে মারধর করেন। এর জের ধরে সকাল ১০টার দিকে শাহিন শিকদার গ্রুপের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে রানা সমর্থিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের লোকজনকে ধাওয়া করেন। পরে বেলা ১১টার দিকে আব্দুল্লাহ আল মামুনের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে কলেজ মোড় সংলগ্ন শাহিন শিকদারের দলীয় কার্যালয়ে হামলা করেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এই হামলার ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে নয় নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে সোহেল নামে এক যুবদল কর্মীর হাতের কব্জি গুরুতর জখম হয়ে বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

শাহিন শিকদার বলেন, ‘সকালে কয়েকজন নেতাকর্মী ফুল দিতে গেলে রানা ভাইয়ের সমর্থকরা তাদের কিলঘুষি ও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। পরে ছাত্রদলের এক ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। এ নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় তারা সংঘবদ্ধ হয়ে দেশি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাকে সমর্থন করা বিএনপির লোকজনের ওপর হামলা করে। তাদের হামলায় যুবদল কর্মী সোহেলের হাতের কব্জি পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাকে রংপুরে পাঠানো হয়েছে। আরও কমপক্ষে পাঁচ জন নেতাকর্মী আহত হয়ে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘দল আমাকে বহিষ্কার করলেও আমি দলত্যাগ করিনি। আমি ঘটনাস্থলে না গেলেও তারা আমার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে। আমাদের নেতাকর্মীসহ কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে। পরে বিকালে আবারও হামলা করে আমার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।’

 

সংঘর্ষের ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এটি নিছক ছোট ঘটনা। তেমন কিছু হয়নি। আর শাহিন শিকদার বহিষ্কৃত নেতা। তার দলীয় কার্যালয় কি থাকতে পারে? আমরা কোনও কার্যালয় ভাঙচুর করিনি।’

 

বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রশ্নে মামুন বলেন, ‘সামান্য হাতাহাতি হয়েছে। এটা তেমন কিছু নয়।’

 

সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে পরে স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতার হস্তক্ষেপে যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার সমর্থকরা দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান বলে জানা গেছে। পরে সাংবাদিকদের ফোন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিকরা গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

 

সোমবার বিকাল ৪টায় সর্বশেষ পাওয়া খবরে উপজেলা শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনিরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমন পরিস্থিতিতে শাহিন শিকদারের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।

 

ভূরুঙ্গামারী সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘রানা গ্রুপ এবং শাহিন শিকদার গ্রুপের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’