দিনে গরম রাতে শীত—মিশ্র আবহাওয়ার এই সময়টা শিশুদের জন্য একটু বিপজ্জনক। শিশুদের ত্বক অনেক সংবেদনশীল হয়। এমন আবহাওয়ার সঙ্গে তারা মানিয়ে নিতে পারে না। দিনের গরমে শিশুরা ঘেমে যায়। ঘর্মাক্ত জামা বড়দের খেয়াল না হলে শিশুর গায়েই শুকিয়ে যায়। এটাও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দুপুরের গরমে গোসলে আরাম লাগে। এ সময় শিশুরা দীর্ঘক্ষণ গোসল করতে পছন্দ করে। রাতের শুরুর দিকে গরম। শেষ ভাগে শীত পড়ে। সকালে উঠে কুয়াশার মধ্য দিয়ে অনেক শিশুকে স্কুলে যেতে হয়। এ জন্য এখনকার আবহাওয়ায় ছোটদের ঠাণ্ডা ও জ্বরে বেশি ভুগতে দেখা যায়। এ জন্যই এখন জ্বর, কাশি, ঠাণ্ডায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। এই সময়ের বেশির ভাগ জ্বরই ভাইরাসজনিত। নানা ধরনের ভাইরাসের কারণে জ্বর হতে পারে। সব ভাইরাস জ্বরের লক্ষণ এক নয়। ভাইরাস জ্বরে শিশুদের সাধারণত সর্দি-কাশি, গলা, মাথা ও শরীরে ব্যথা করে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়টায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় বলে একে সিজনাল ফ্লু বলা হয়।
এ সময় শিশুর সুরক্ষায় দরকার অভিভাবকদের সচেতনতা। শিশুরা সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি ও ছোটাছুটির মধ্যে থাকে। এর ফলে তাদের শরীরে গরমে ঘাম বেশি হয়। এ জন্য এখন শিশুদের সব সময় হালকা সুতির কাপড় পরাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুর পোশাক যেন আঁটসাঁট না হয়। ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে, যাতে বাতাস ঢুকতে পারে। এতে শিশুদের ঘাম কম হবে। শিশুরা ঘেমে গেলে দ্রুত পোশাক বদলে ঘাম মুছে দিতে হবে। শিশুরা বাইরে থেকে ফিরে গোসল করতে চাইলে তত্ক্ষণাত্ গোসল করতে দেওয়া যাবে না। আগে শরীর ঠাণ্ডা হতে দিতে হবে। ফ্যানের নিচে কিছুক্ষণ বসে গা জুড়াতে হবে। শিশুর শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরলে এরপর গোসল করাতে হবে। গরমের সময় গোসলে নিয়মিত সাবান ব্যবহার করতে হবে। গোসল শেষে খুব ভালো করে গা-মাথা ও চুল মুছে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন চুলের গোড়ায় পানি না থাকে।
শিশুরা গরমে কাতর হলে আইসক্রিম বা কোল্ড ড্রিংকস খেতে বায়না করে। গরমের সময় আইসক্রিম বা কোল্ড ডিংকস খেতে ভালো লাগলেও আদতে তাতে উপকার নেই। আবার বাসায় ফিরে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি পান করে। এটা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। গরম থেকে এসেই বেশি ঠাণ্ডা পানি পান করা যাবে না। এতে গরম ও ঠাণ্ডা তাপমাত্রার বেশি পার্থক্যের কারণে শিশুদের ঠাণ্ডায় ভুগতে হতে পারে।
বাইরে থেকে ফিরলে শিশুকে হাত ধুয়ে দিতে হবে। শিশুর মধ্যে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যাতে শিশুকে জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে। গরমে শিশুদের শরীর ঘেমে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। এতে পানিশূন্যতায় পড়ে। পানিশূন্যতা রোধে শিশুকে এ সময় ডাবের পানি, তাজা ফলের জুস ও বেশি বেশি তরলজাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় ফলমূল এ সময় বেশ উপকারী। বিশেষ করে লেবু পানির শরবত পান করানো যেতে পারে।
দুগ্ধপোষ্য শিশুদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ঠাণ্ডায় শিশুর নাক বন্ধ থাকলে নরসল দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। জ্বর-ঠাণ্ডায় শিশুর হাঁচি হাতে লাগলে তখনই সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সাধারণ জ্বর হলে শিশুকে বিশ্রামে রাখতে হবে। চিকিত্সকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়াতে হবে। কুসুম গরম পানিতে গামছা ভিজিয়ে গা-মাথা মুছে দিলে আরাম পাবে। জ্বরে ঠাণ্ডা পানি, বরফ পানি বা মাথায় ক্রমাগত পানি ঢালার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনে ঘরের ফ্যান ছেড়ে রাখতে পারেন। জ্বরের শিশুকে খাবার খাওয়াতে জোর করা যাবে না। এতে বমি হতে পারে।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে হওয়া শিশুদের ঠাণ্ডা জ্বর সাধারণত কয়েক দিনেই সেরে যায়। এ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে জ্বরের তীব্রতা বৃদ্ধি, তিন দিনের বেশি থাকা, খাবারে অনীহা হলে শিশুকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এখন ডেঙ্গুর সময়। তাই জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না।