প্রায় শেষ পর্যায়ে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ

প্রকাশকালঃ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:৪৯ অপরাহ্ণ ২০৬ বার পঠিত
প্রায় শেষ পর্যায়ে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ

ট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসে এই এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। গতকাল পতেঙ্গা এলাকার মহাজনঘাট থেকে তোলা। ছবি : রবি শংকর

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রধান সড়ক প্রায় ১০ কিলোমিটার। সড়কটির দুই পাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্থাপনা। এই সড়কের যানজটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এই অবস্থা থেকে মুক্তি ও দ্রুত যোগাযোগের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৫.৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চট্টগ্রাম উড়ালপথ।

আগামী অক্টোবরে এর উদ্বোধন হতে পারে। সে লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। কাজ শেষ পর্যায়ে, উদ্বোধনের প্রস্তুতিউড়ালপথটি একই সঙ্গে কাস্টম হাউস, সিইপিজেড, কেইপিজেড ও আন্তর্জাতিক শাহ আমানত বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুততর করবে। নগরের দক্ষিণের সঙ্গেও যোগাযোগ সহজতর হবে।


কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে, যা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার জন্য মাইলফলক। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। মন্ত্রণালয় থেকে অক্টোবরের মধ্যে মূল পথের বাকি কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। উদ্বোধন শেষে যান ওঠানামার ১৫টি পথ (র‌্যাম্প) নির্মাণ করা হবে।

এসব র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার। জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, উড়ালপথের উদ্বোধনের তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্ণফুলী টানেল) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন উড়ালপথ উদ্বোধনের সম্ভাবনা আছে। 

ঢাকা উড়ালপথ গত ২ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের উড়ালপথ কবে নাগাদ চালু হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্পটির পরিচালক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মো. মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের টার্গেট দেওয়া হয়েছে আগামী অক্টোবরের মধ্যে ১৫.৫ কিলোমিটার অর্থাৎ মূল এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করার। 


আশা করি, এই সময়ের মধ্যে মূল এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারব। এরপর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর টোল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে।’ তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মূল এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর ১৫টি স্থান দিয়ে যানবাহন ওঠানামার (র‌্যাম্প) পথের নির্মাণকাজ শুরু হবে। দরপত্র কার্যক্রম চলছে। 

উড়ালপথে যানবাহন চলাচল শুরু হলে নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। 


স্বপ্নের এই টানেলের নির্মাণকাজ শেষ। এখন অপেক্ষা উদ্বোধনের। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, উড়ালপথ, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক ও পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে। বর্তমানে আউটার রিং রোড দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যানবাহন চলছে। এখন টানেলের পাশাপাশি উড়ালপথ চালু হলে চট্টগ্রামে যোগাযোগব্যবস্থা আমূল বদলে যাবে। 

বিশেষ করে উড়ালপথের কারণে নগরের প্রধান সড়কের যানবাহনের চাপ অনেকাংশে কমে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বেলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের দুটি উড়াল সেতুর সঙ্গে নির্মীয়মাণ লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর উড়ালপথ সংযুক্ত হবে। এতে নগরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া-আসায় সময় অনেক কম লাগবে। 


তিনি বলেন, নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান উড়াল সেতু, মুরাদপুর থেকে আখতারুজ্জামান উড়াল সেতু হয়ে লালখানবাজার এলাকায় উড়ালপথ হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কিংবা পতেঙ্গা যেতে যানজটের কারণে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। আবার অনেক সময় দু-তিন ঘণ্টাও সময় লাগে। নগরের প্রধান সড়কের প্রায় ২৫ কিলোমিটারের এই দূরত্বে যাওয়া-আসায় আর যানজটে পড়তে হবে না। 

তবে র‌্যাম্পগুলো চালু না হলে এর পুরো সুফল পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জু বলেন, উড়ালপথ চালু হলে শুধু চট্টগ্রাম নগরে যোগাযোগব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। এটি একটি মাইলফলক হবে। চট্টগ্রামের উন্নত যোগাযোগব্যবস্থায় দেশের অর্থনীতি আরো চাঙা হবে। 

ব্যবসা-বাণিজ্য, বন্দর, বিমানবন্দরসহ সব বিষয় বিবেচনায় উড়ালপথ চট্টগ্রামের জন্য বিশাল আশীর্বাদ। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীন নগরের লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়ালপথের নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে একনেকে অনুমোদিত হয়। তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকার বড় এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় দুই বছর বেড়ে গত বছরের জুন মাসে শেষ হয়। 


তবে প্রকল্প ব্যয় বাড়েনি। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ বেড়ে দাঁড়ায় সাত বছর। এদিকে প্রায় ১০ মাস আগে প্রথম সংশোধিত আকারে ব্যয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, নগরের বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর ও দ্রুততর করার লক্ষ্যে চতুর্থ প্রকল্প হিসেবে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়ালপথ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। মূল উড়ালপথে যানবাহন ওঠানামার জন্য ১৫টি স্থানে র‌্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এসব র‌্যাম্প নির্মাণ শুরু হবে মূল এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর। 

এখন তোড়জোড় চলছে মূল এক্সপ্রেসওয়ের অবশিষ্ট কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগে উদ্বোধন করা। কাজ শেষ পর্যায়ে, উদ্বোধনের প্রস্তুতি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এই দৃশ্য সম্প্রতি চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকা থেকে ড্রোনে তোলা।