বিদ্যুৎ বিভাগে উৎস কর প্রত্যাহারের দাবি

প্রকাশকালঃ ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:২৩ অপরাহ্ণ ২৭১ বার পঠিত
বিদ্যুৎ বিভাগে উৎস কর প্রত্যাহারের দাবি

উৎসে করে বিদ্যুতের লোকসান ২৪০০ কোটি টাকা, প্রত্যাহারের দাবি বিদ্যুৎ বিভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের অর্থ পরিশোধের সময় প্রদেয় অর্থের উপর ছয় শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান প্রত্যাহার করার অনুরোধ করেছে।

 

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, আয়কর আইন অনুযায়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত কোনো কোম্পানিকে বিদ্যুৎ ক্রয়ের অর্থ পরিশোধকালে প্রদেয় অর্থের ওপর ছয় শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা (বিইআরসি) বা সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) বাল্ক বিদ্যুৎ বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের কল্যাণ বিবেচনায় কোনো প্রকার কর ও মুনাফা বিবেচনা করা হয়নি। তাছাড়া, বাবিউবোর ব্যয় বিক্রয় মূল্য দ্বারা নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় প্রতি বছর বাবিউবোর বিপুল পরিমাণ লোকসান হচ্ছে। ছয় শতাংশ উৎসে করের জন্য প্রতি বছর লোকসানের পরিমাণ প্রায় ২০০০ কোটি টাকা থেকে ২৪০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।  
 

এ বাস্তবতায় যেহেতু বিদ্যুৎ খাত দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার ব্যয় প্রভৃতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, সেহেতু বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের যেকোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের কর আরোপ করা হলে তা বিদ্যুৎখাতের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থাসহ দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে।

 

চিঠিতে আরও বলা হয়, বাবিউবোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল থেকে ছয় শতাংশ আয়কর কর্তনের ফলে বার্ষিক কর্পোরেট কর উৎসে কর আদায়ের চেয়ে অনেক কম হয়। কোম্পানিগুলোর বিল হতে উৎসে কর কর্তনের ফলে কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ছয় শতাংশ উৎসে কর বহাল রাখলে বাবিউবোর সঙ্গে কোম্পানির স্বাক্ষরিত চুক্তি সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। চুক্তি সংশোধন করলে ছয় শতাংশ কর বাবিউবোর ওপর বর্তাবে। এর ফলে বাবিউবো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে যা ভর্তুকির মাধ্যমে পুনর্ভরণ করা প্রয়োজন হবে।

 

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বাবিউবো এবং সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে নির্ধারিত ট্যারিফের ওপর ছয় শতাংশ এবং বিতরণকারী সংস্থা বা কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত বাল্ক ট্যারিফের ওপর অতিরিক্ত ছয় শতাংশ আয়কর ধার্য করা হচ্ছে, যা দ্বৈত করা আরোপ।

 

বিদ্যুৎ বিল হতে ছয় শতাংশ উৎসে কর কর্তন করা হলে কর পরবর্তী বছরে প্রদেয় কর্পোরেট করের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। তবে বিদ্যুৎ বিলের মধ্যে ফুয়েল (এইচএফও, ডিজেল ও গ্যাস) অংশ পিপিএ (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) পাস থ্রু আইটেম হওয়ায় হওয়ায় এর বিপরীতে কর্তনকৃত উৎসে কর পুরোপুরি সমন্বয়ের সুযোগ হচ্ছে না। জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তন করে বিধায় ওই কর উৎসে দুইবার কর্তন হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এ তে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জন্য এই ছয় শতাংশ কর সংস্থান না থাকায় কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হ্রাসে সরকার ধাপে ধাপে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। উৎস কর বিদ্যুতের মূল্যের শতাংশ হারে হওয়ায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎস করের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নির্বাহ করা বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় উল্লিখিত ছয় শতাংশ উৎসে কর কর্তনের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন।