পরিবারের সদস্যদের আনন্দে রাখা সুন্নত

প্রকাশকালঃ ১৫ জুন ২০২৩ ০৩:৪৭ অপরাহ্ণ ১৮৪ বার পঠিত
পরিবারের সদস্যদের আনন্দে রাখা সুন্নত

স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসার ভিত্তি হলো পরিবার। সুখে থাকার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি আদর্শ পরিবার গড়ে তুলতে সব সময় তাদের শুধু শাসনই করতে হয় না; বরং মাঝেমধ্যে হালাল পন্থায় তাদের আনন্দ দেওয়াও সুন্নত। রাসুল (সা.) পরিবারের সদস্যদের যেমন নতুন নতুন বিষয় শিক্ষা দিতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও করতেন।

তাঁদের বিভিন্নভাবে আনন্দ দিতেন। নিম্নে রাসুল (সা.)-এর এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেখানে রাসুল (সা.) তাঁর পরিবারকে আনন্দ দিয়েছেন।

কন্যা ও জামাতাকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) মাঝেমধ্যে কথার ছলে তাঁর কন্যা ও জামাতাকেও আনন্দ দিয়েছেন। সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) ফাতিমা (রা.)-এর গৃহে এলেন; কিন্তু আলী (রা.)-কে ঘরে পেলেন না।


তিনি ফাতিমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখো তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন।

তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গেছে এবং শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠো, হে আবু তুরাব! ওঠো, হে আবু তুরাব! (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)


উপরোক্ত হাদিসে রাসুল (সা.) তাঁর মেয়েকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বলেছিলেন, ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’ আবার আলী (রা.)-কে ধুলাবালিতে শুয়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ বলার উদ্দেশ্যও ছিল আনন্দ দেওয়া।


স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া : রাসুল (সা.) তাঁর স্ত্রীদেরও আনন্দে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি তাঁদের আনন্দ নষ্ট হয় এমন কাজ করতে অপছন্দ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলা করত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩০)


এমনকি রাসুল (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এক সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭৮)

নাতি-নাতনিদের আনন্দ দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। রাসুল (সা.) সিজদা করলে হাসান-হুসাইন লাফ দিয়ে তাঁর পিঠে উঠত। রাসুল (সা.) সিজদা থেকে ওঠার সময় তাদের হাত দিয়ে নামিয়ে দিতেন। তিনি আবার সিজদা করলে তারাও আবার পিঠে উঠত। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেন। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৭৮৭৬)

অন্যান্য হাদিসে রাসুল (সা.) স্বীয় নাতনি উমামা বিনতে আবুল আস-কেও আনন্দ দিয়েছেন বলে জানা যায়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাসুল (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন