গত ৬ বছরে কুড়িগ্রামে ভিটা হারিয়েছে ১৫ হাজার পরিবার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২১ আগu ২০২৫ ০৪:০৫ অপরাহ্ণ   |   ৩৩ বার পঠিত
গত ৬ বছরে কুড়িগ্রামে ভিটা হারিয়েছে ১৫ হাজার পরিবার

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা শওকত আলী (৬০) ও ছলিমা বেগম (৫০) দম্পতি। ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই দম্পতির বাড়ি ১০ বার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়েছে।

 


 

সম্প্রতি উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে নদী ভাঙন শুরু হলে আবারও বসতি হারান। বর্তমানে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে পাঁচগাছি ইউনিয়নের চর পার্বতীপুর গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।

 


 

কুড়িগ্রাম জেলার সাড়ে চার শতাধিক দ্বীপচরে প্রতিবছর গড়ে দুই হাজার পরিবার নদীভাঙনে তাদের বসতি হারান।
 

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদের ভাঙনে ১৫ হাজার পরিবার বসতবাড়ি হারিয়েছেন। এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় ৪৪৭টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
 



 

এ ছাড়া রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী উপজেলার সোনাপুরে শতাধিক পরিবার রাজারহাট উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে ৬৩টি পরিবার এবং ফুলবাড়ি উপজেলায় ধরলা নদীর ভাঙনে ৬টি পরিবার তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছে। এসব পরিবার অন্যের জমিতে ও বাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে।
 

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ভগবতীপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ওই চরের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের পূর্ব গোবিন্দপুর এলাকায় প্রায় ৫০০মিটার এলাকায় ভাঙন দেখা গেছে। গত ১৫ দিনে নদী ভাঙনে ওই এলাকার প্রায় ২৫টি বসতবাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এসব নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো কেউ অন্যের বাড়িতে আবার কেউ কেউ আবাসন প্রকল্পের মাঠে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ওই এলাকায় দুইটি মসজিদ, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সেতুটি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন বসতবাড়ি নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে।

 


 

ব্রহ্মপুত্র তীরের বাসিন্দা আদম আলী (৬০) বলেন, আমার জীবনে অন্তত ১৫ বার বাড়ি ভাঙছে। এবারে নদী ভাঙন শুরু হলে সবাই বাড়ি ভেঙে নিয়ে চলে যাচ্ছে। ২০ বছরের পুরাতন ভিটা রেখে যেতে মায়া হচ্ছে। তাই এখনো যাইনি। কিন্তু না গিয়ে উপায় নেই। ভাঙতে ভাঙতে নদী আঙিনায় এসেছে। যে কোনো দিন ভেঙে নিবে।
 

পূর্ব গোবিন্দপুর গ্রামের ছলিমা বেগম বলেন, ‘নদী ভাঙনে ফসলি জমি, বসতবাড়ি চলে গেলেও সরকারি ক্ষতিপূরণ তারা পাননি। এক সময় কয়েক বিঘা ফসলি জমি থাকলেও এখন বাড়ি করার জায়গা নেই।

 


 

রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াসাম এলাকার উমর আলী, সাইফুল ইসলাম, ছামিরুল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। দেখতে দেখতে প্রায় ২৫টি বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছে।
 

পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল বাতেন সরকার বলেন, গত কয়েকদিনে আটটি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে এসেছি। ওই এলাকায় ভাঙন চলমান আছে।
 

কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পাঁচটি পয়েন্ট ভাঙন ঝুঁকিতে আছে। ইতিমধ্যে তিনটি পয়েন্টে নদী ভাঙন রোধে কাজ চলমান রয়েছে। পাঁচগাছি ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুইটি পয়েন্টে দ্রুতই কাজ শুরু করা হবে।