ধূমপান বিষপানের সমান, এটা জানার পরেও অনেকে এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয় ৪ লাখ মানুষ এবং ১ লাখ ৬০ হাজার জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ধূমপায়ীদের অন্যান্য রোগসহ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণা বলছে, দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। ধূমপানের সঙ্গে শারীরিক জটিলতার বিষয়টি ধূমপায়ী জড়িত। তবুও এই বদ অভ্যাস ছাড়তে পারেন না অনেকে। তবে অনেকেই আছেন যারা ধূমপান ছাড়তে চান তবে তার জন্য মানসিক শক্তি নেই।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জিয়ানুর কবির ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন। জিয়ানুর কবির জানান, গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ ধূমপায়ীর ধূমপান ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা আছে। ধূমপান ছাড়ার তেমন কোনো উপায় না থাকলেও গবেষণায় দেখা যায় যে, যারা নিয়মিত সাইকোলজিক্যাল থেরাপি নিয়েছেন তারা ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে বেশ সফলতা পেয়েছেন। বিশেষত, যারা অতীতে ধূমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করেছেন এবং ছাড়তে অসুবিধা হয়েছে, তাদের সাইকোলজিক্যাল থেরাপি ভালো সহায়তা করতে পারে।
বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ধূমপায়ী টিবি রোগীদের ওপর এক গবেষণা হয়। এতে অংশ নেন ১ হাজার ৫২৭ জন টিবি রোগী। তাদের সবাইকে খুব সংক্ষিপ্ত সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানো হয়। গবেষণায় অংশ নেয়া অর্ধেক রোগীকে ধূমপান ছাড়াতে সাহায্যকারী ওষুধ সাইটিসিন দেয়া হয়। আর অর্ধেককে দেয়া হয়নি। দেখা গেছে, এ পরামর্শ যারা গ্রহণ করেছেন, তাদের এক-তৃতীয়াংশ ছয় মাসের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন। যারা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাদের এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তারা আর সিগারেট ধরেননি।
জিয়ানুর কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত সাইকোলজিক্যাল থেরাপি সম্পূর্ণরূপে ধূমপান ছাড়তে সহায়তা করে। থেরাপির মাধ্যমে ধূমপানের অভ্যাসের কারণগুলিকে বের করে সাইকোলজিক্যালি সমাধান করা হয়। তীব্র মানসিক চাপ ধূমপানের তাগিদ তৈরি করে, সাইকোলজিক্যাল থেরাপি সেই চাপ মোকাবিলার পদ্ধতিগুলোর অনুসন্ধান করে, চ্যালেঞ্জিং ও অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে ধূমপানের ইচ্ছাটিকে হ্রাস করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, যেমন- হতাশা বা উদ্বেগের লক্ষণগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য যদি ধূমপান একটি প্রতিরোধের পদ্ধতি হয়, তবে সাইকোলজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে বিকল্প মোকাবিলার পদ্ধতিগুলো বিকশিত হতে পারে। সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণের দিকেও মনোযোগ দিতে পারে। যদি হতাশা, উদ্বেগ বা অন্য কোনো অবস্থার লক্ষণ দেখা যায়, তবে ধূমপানের ইচ্ছা বাড়তে পারে। ধূমপানের জন্য ট্রিগার সম্পর্কে সচেতনতা থেরাপিতে অর্জন করা যেতে পারে এবং বিকল্প আচরণগুলোও অনুসন্ধান করা যেতে পারে, উভয়ই ধূমপানের অভ্যাসটি ভাঙ্গতে সাহায্য করতে পারে।
অনেকগুলো গবেষণায় কগনিটিভ বিহেবিয়ার থেরাপি (সিবিটি) ধূমপান বন্ধে সবচেয়ে বেশি সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে। সিবিটি চিকিৎসা ধূমপান ত্যাগের ইচ্ছা বাড়াতেও সহায়তা করতে পারে। তবে ধূমপান ছাড়ার ক্ষেত্রে কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে নিয়মিত কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি নিলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে যাদের আসক্তি খুব বেশি তাদের কিছু মেডিসিনেরও প্রয়োজন হতে পারে।