দুধ থেকে বৈচিত্র্যময় খাবার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৮ আগu ২০২৫ ০২:৩৫ অপরাহ্ণ   |   ৩০ বার পঠিত
দুধ থেকে বৈচিত্র্যময় খাবার

শিশু থেকে প্রবীণ—সব বয়সী মানুষের প্রিয় খাবারের তালিকায় দুধের অবস্থান সবার আগে। সরাসরি পান করার পাশাপাশি দুধ থেকে তৈরি হয় অসংখ্য সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার, যা শুধু রসনা তৃপ্তই করে না, বরং পুষ্টির ঘাটতি পূরণেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রান্নার ঐতিহ্যে দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারের অবদান তাই অনন্য।
 

উৎসব-অনুষ্ঠানে দুধের অপরিহার্যতা

ঈদ, পূজা-পার্বণ কিংবা জন্মদিন—কোনো বিশেষ দিনেই দুধ ছাড়া আয়োজন কল্পনা করা যায় না। চাল, দুধ, চিনি ও ঘি মিশিয়ে তৈরি পায়েস হোক বা ঘন দুধে রান্না করা খির—বাংলার প্রতিটি গ্রামে এগুলো জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। ঢাকার মিষ্টি প্রস্তুতকারক কাদের মিয়া বলেন, “দুধ ছাড়া ছানা হয় না, আর ছানা ছাড়া মিষ্টির জগৎই অচল। রসগোল্লা, রসমালাই, সন্দেশ, কালোজাম—সবই দুধের দান।”
 

বগুড়া, নওগাঁ কিংবা পাবনার মিষ্টি দই ইতোমধ্যেই দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাদৃত। শুধু তাই নয়, এক কাপ চায়ে দুধ মেশানো এখন অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাস। তরুণদের কাছে কফি, হট চকলেট, লাচ্ছি, ফালুদা কিংবা মিল্কশেক ব্যাপক জনপ্রিয়। গ্রীষ্মে দুধ দিয়ে তৈরি আইসক্রিম শিশু থেকে বড় সবার মন জয় করে।
 

রান্নায় দুধের ব্যবহার

বাংলার ঐতিহ্যবাহী রান্নায়ও দুধের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোরমা, বিরিয়ানি বা বিশেষ তরকারিতে দুধ কিংবা দই মেশালে ঝোল হয় ঘন ও সুস্বাদু। দুধ থেকে তৈরি পনির এখন শহুরে খাবারের তালিকায় নিয়মিত। পনিরের তরকারি, পনির-সবজি কিংবা পনির স্যান্ডউইচ তরুণদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। অন্যদিকে ডেজার্টে কাস্টার্ড, পুডিং, কেক—সবই দুধ ছাড়া অসম্পূর্ণ।
 

পুষ্টিগুণের ভান্ডার

পুষ্টিবিদদের মতে, দুধ একটি পূর্ণাঙ্গ খাদ্য। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও বি১২, ফসফরাস, প্রোটিনসহ নানা খনিজ উপাদান। পুষ্টিবিদ ডা. রাশেদা আক্তার বলেন, “দুধ শিশুদের বৃদ্ধি, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্য এবং বয়স্কদের পুষ্টির জন্য অপরিহার্য। এটি হাড় ও দাঁত মজবুত করে।”
 

তবে বাংলাদেশে মাথাপিছু দৈনিক দুধ গ্রহণের হার এখনও প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের নিচে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, প্রতিদিন একজন মানুষের অন্তত ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে এ হার মাত্র ১০৫–১৬০ মিলিলিটার।
 

দুধশিল্পের অর্থনৈতিক অবদান

খাবারের পাশাপাশি দুধ দেশের অর্থনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ খাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা থেকে শুরু করে প্রাণ, আড়ং, ইম্পেরিয়ালসহ বিভিন্ন কোম্পানি দুধ প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করছে গুঁড়া দুধ, দই, মাখন, ঘি, পনির, আইসক্রিমসহ অসংখ্য পণ্য।
 

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে রয়েছেন গরু পালনকারী কৃষক, দুগ্ধ সংগ্রাহক, পরিবহনকারী, প্রসেসিং কারখানা ও বিপণনকারী।
 

চ্যালেঞ্জ ও নিরাপত্তা

দুধ উৎপাদনে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় খামার থেকে সংগ্রহ করা দুধে ভেজাল মেশানো হয়। বিএসটিআইয়ের জরিপে দেখা গেছে, বাজারজাত তরল দুধের প্রায় ২০ শতাংশ মানসম্মত নয়। পুষ্টিবিদরা মনে করেন, যদি বিশুদ্ধ দুধের নিশ্চয়তা দেওয়া যায় তবে এটি হবে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী ও নিরাপদ পুষ্টির প্রধান উৎস।
 

ভোক্তার প্রত্যাশা

ঢাকার গৃহিণী নাজনীন সুলতানা বলেন, “আমার ছেলেমেয়েদের প্রতিদিন দুধ খাওয়াই। কিন্তু বাজারের দুধে ভেজালের খবর শুনে আতঙ্কিত থাকি। আমরা চাই নিরাপদ দুধ।”
 

পুষ্টিবিদরা বলছেন, নিরাপদ ও সহজলভ্য দুধ নিশ্চিত করা গেলে শিশুদের অপুষ্টি কমানো, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।