প্রকাশকালঃ
০৪ জুন ২০২৩ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ ১২৮ বার পঠিত
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, (বনি ইসরাঈলের মধ্যে) তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই দোলনায় কথা বলেনি। (১) ঈসা ইবনে মারইয়াম। মারইয়াম (আ.)-এর গর্ভে ঈসা (আ.) অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করলে লোকজন তাঁর ব্যাপারে সন্দিহান হলো। তখন মারইয়াম (আ.)-এর ইঙ্গিতে ঈসা (আ.) তাঁর মাতার পক্ষ থেকে জবাব দিয়ে বললেন, ‘আমি আল্লাহর বান্দা।
তিনি আমাকে কিতাব (ইনজিল) দান করেছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি, তত দিন সালাত ও জাকাত আদায় করতে এবং আমার মায়ের অনুগত থাকতে। আল্লাহ আমাকে উদ্ধত ও হতভাগা করেননি।
আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন জীবিত পুনরুত্থিত হবো।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ২৯-৩৩)
(২) সাহেবে জুরাইজ (জুরাইজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বাচ্চা)। জুরাইজ একজন আবেদ বান্দা ছিলেন। তিনি নিজের জন্য একটি ইবাদতগাহ তৈরি করলেন।
তিনি সেখানে থাকা অবস্থায় একদিন তার মা সেখানে এলেন। এ সময় তিনি ছালাতে রত ছিলেন। তার মা বললেন, ‘হে জুরাইজ, তখন তিনি (মনে মনে) বলেন, ‘হে রব, একদিকে আমার সালাত আর অন্যদিকে আমার মা।’ জুরাইজ সালাতেই রত থাকলেন। তার মা চলে গেলেন।
পরবর্তী দিন তার মা এলেন । এবারও তিনি সালাতে মগ্ন ছিলেন। তার মা তাকে ডাকলেন, ‘হে জুরাইজ’, তিনি (মনে মনে) বলেন, ‘হে রব, একদিকে আমার সালাত আর অন্যদিকে আমার মা।’ তিনি তার সালাতেই ব্যস্ত থাকলেন। এভাবে তৃতীয় দিনেও জুরাইজ একই কাজ করলে তার মা বললেন, ‘হে আল্লাহ, একে তুমি জিনাকারী নারীর মুখ না দেখা পর্যন্ত মৃত্যু দিয়ো না।’
বনি ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা আলোচিত হতে লাগল। এক ব্যভিচারী নারী ছিল। সে উল্লেখযোগ্য রূপ-সৌন্দর্যের অধিকারিণী ছিল। সে বলল, তোমরা যদি চাও, আমি তাকে (জুরাইজ) বিভ্রান্ত করতে পারি। সে তাকে ফুসলাতে লাগল; কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলেন না। অতঃপর সে তার ইবাদতগাহের কাছাকাছি এলাকায় এক রাখালের কাছে এলো। সে নিজের ওপর তাকে অধিকার দিল এবং উভয়ে ব্যভিচারে লিপ্ত হলো। এতে সে গর্ভবতী হলো। সে বাচ্চা প্রসব করে বলল, এটা জুরাইজের সন্তান। বনি ইসরাঈল (ক্ষিপ্ত হয়ে) তার কাছে এসে তাকে ইবাদতগাহ থেকে বের করে আনল, তার ইবাদতগাহ ধূলিসাৎ করে দিল এবং তাকে মারধর করতে লাগল। জুরাইজ বললেন, তোমাদের কী হয়েছে? তারা বলল, তুমি এই নষ্টা নারীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছ। ফলে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তিনি বলেন, শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে এলো। জুরাইজ বললেন, আমাকে একটু সুযোগ দাও সালাত আদায় করে নিই। তিনি সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই শিশু, তোমার পিতা কে?’ সে বলল, ‘আমার পিতা অমুক রাখাল।’ উপস্থিত লোকেরা তখন জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুম্বন করতে লাগল এবং তার শরীরে হাত বোলাতে লাগল। আর
তারা বলল, এখন আমরা তোমার ইবাদতগাহটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। তিনি বললেন, দরকার নেই; বরং আগের মতো মাটি দিয়েই তৈরি করে দাও। অতঃপর তারা তা-ই করল।
(৩) একটি শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় একটি লোক দ্রুতগামী ও উন্নত মানের একটি পশুর ওপর সওয়ার হয়ে সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। তার পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল উন্নত। শিশুটির মা বলল, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেটিকে এই ব্যক্তির মতো যোগ্য করো।’ শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে লোকটির দিকে এগিয়ে এসে তাকে দেখতে লাগল। অতঃপর বলল, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো কোরো না।’ অতঃপর ফিরে এসে পুনরায় মায়ের দুধ পান করতে লাগল। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি যেন এখনো দেখছি রাসুল (সা.) শিশুটির দুধ পানের চিত্র তুলে ধরছেন এবং নিজের তর্জনী মুখে দিয়ে চুষছেন। তিনি বলেন, এদিকে লোকেরা একজন মেয়ে লোককে বাঁ দিকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। আর বলছিল, তুমি জিনা করেছ এবং চুরি করেছ। মেয়ে লোকটি বলছিল, ‘আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক।’ শিশুটির মা বলল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার সন্তানকে এই নষ্টা নারীর মতো কোরো না।’ শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল, অতঃপর বলল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এই নারীর মতো করো।’
এ সময় মা ও শিশুটির মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। মা বলল, হায় দুর্ভাগা! একটি সুশ্রী লোক চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে এরূপ যোগ্য করে দাও।’ তুমি প্রত্যুত্তরে বললে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো কোরো না।’ আবার এই ক্রীতদাসীকে লোকেরা মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে, তুমি জিনা করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে এরূপ কোরো না।’ আর তুমি বললে, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এরূপ কোরো।’ শিশুটি এবার জবাব দিল, প্রথম ব্যক্তি ছিল স্বৈরাচারী জালিম। সে জন্যই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো কোরো না।’ আর এই নারীকে তারা বলল, তুমি ব্যভিচার করেছ। প্রকৃতপক্ষে সে ব্যভিচার করেনি। তারা বলছিল, তুমি চুরি করেছ। আসলে সে চুরি করেনি। এ জন্যই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই মেয়েলোকটির মতো কোরো।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৩৬; মুসলিম, হাদিস : ২৫৫০)