মুমিনদের হিজরি নববর্ষের শিক্ষা

প্রকাশকালঃ ২০ জুলাই ২০২৩ ০৫:২৩ অপরাহ্ণ ১৪৯ বার পঠিত
মুমিনদের হিজরি নববর্ষের শিক্ষা

ময়ের মূল্যায়নে মুমিনের অনুভূতি সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও গভীর। কেননা পরকালে আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি তোমার জীবন কোথায় নিঃশেষ করেছ? তিনি তাঁর যৌবন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি তা কোথায় ব্যয় করেছ? এ জন্য সে সর্বদা সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকে। সে অনর্থক ও নিষ্ফল কাজে সময় ব্যয় করে না। একজন মুমিন কিভাবে সময় অপচয় করতে পারে, অথচ সে জানে সময়ই তার সবচেয়ে মূল্যবান ও পরম মূলধন।

এই পুঁজি হারালে সে নিঃস্ব হয়ে যাবে। সময় এমন অমূল্য দান, যা প্রাপ্তির জন্য ব্যক্তির উচিত আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। সময়ের সদ্ব্যবহার হলো সেই কৃতজ্ঞতা আর এর অপচয় হলো আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই নামান্তর। ওমর ইবনুল আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, নিশ্চয়ই সময় তোমার ভেতর সক্রিয়, সুতরাং তুমি তাতে সক্রিয় থাকো।

অর্থাৎ সময় প্রতিনিয়ত তোমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। সুতরাং তুমি ভালো কাজের মাধ্যমে তাকে মূল্যবান করে তোলো। মুমিনের অনুভূতিতে সূর্য প্রতিদিন নতুন দিনের বার্তা নিয়ে আসে। সে বলে, হে মানুষ, আমি নবসৃষ্ট এবং তোমার কাজের সাক্ষী।


তুমি আমার কাছ থেকে পাথেয় সংগ্রহ কোরো। ভালো কাজের মাধ্যমে আমাকে মূল্যবান করে তোলো এবং মূল্যবান কোরো তোমাকেও। তুমি নিজেকে এতটা মূল্যবান করে তোলো, যেন তুমি মানবসমাজে স্মরণীয় হয়ে থাকো; যেন তোমার নাম স্মরণে এলে মানুষ তোমার জন্য দোয়া করে। কেননা আমি আজ চলে যাচ্ছি, আর কখনো ফিরে আসব না। যে ব্যক্তি নিষ্ফল দিন কাটাতে ভয় পায়, যে চায় না তার কথা ও কাজ ব্যর্থ হয়ে না যাক, সে যেন আজকের ভালো কাজগুলো আগামীকালের জন্য ফেলে না রাখে।

কেননা আগামীকালের জন্যও নির্ধারিত কাজ আছে। সে অন্যদিনের কাজকে নিজের সীমানায় প্রবেশ করতে দেবে না।


মুমিন উদগ্রীব থাকে যেন গতকালের তুলনায় তার আজকের দিনটি ভালো হয়। আর আগামীকাল হবে তার চেয়ে ভালো। মুমিন চেষ্টা করে মৃত্যুর পর যেন সে দীর্ঘ জীবন পায়। তার নেক আমল ও কল্যাণমূলক কাজ তাকে মানুষের স্মরণে সজীব রাখে। ফলে সে উপকারী জ্ঞান, উত্তম আমল, কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান, সদকায়ে জারিয়া ও আল্লাহভীরু পরিবার পৃথিবীতে রেখে যায়। যেন এসব উৎস থেকে পরকালেও সে সাওয়াব লাভ করতে পারে এবং পরকালে তাঁর ধূসর প্রান্তর যেন এসব বৃক্ষের ফল ও ফুলে নয়নাভিরাম উদ্যানে পরিণত হয়।

মুমিন পৃথিবীতে জীবনযাপন করলেও প্রাত্যহিক জীবনে তার দৃষ্টি পরকাল পর্যন্ত প্রসারিত থাকে। ফলে সে বৃক্ষ রোপণ করে পৃথিবীতে আর ফল প্রত্যাশা করে পরকালে। সাহাবি আবু দারদা (রা.) জীবনের শেষভাগে একটি আখরোটগাছ রোপণ করেন। লোকেরা বলল, আপনি জীবনের শেষভাগে এসে আখরোটগাছ রোপণ করছেন? এই গাছ তো দীর্ঘ সময়ের পর ফল দেয়। আবু দারদা (রা.) বলেন, কি ক্ষতি হবে যদি আমি সাওয়াব লাভ করি আর মানুষ এর ফল ভোগ করে? 

তিনি বৃদ্ধ বয়সে একটি জাইতুনগাছ লাগানোর সময় বলেছিলেন, আমাদের জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা গাছ লাগিয়েছিল, আমরা ফল ভোগ করেছি। আমরা বৃক্ষ রোপণ করছি, যেন আমাদের পরবর্তীরা তার ফল খেতে পারে। নববর্ষ এভাবেই মুমিনের অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে এবং তার পার্থিব জীবনকে পরকালমুখী করে। কেননা নববর্ষ শুধু নতুন দিনের ঘোষণা দেয় না, এটি ফেলে আসা দিনের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।