কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে ঘূর্ণিঝড়

প্রকাশকালঃ ২০ মে ২০২৩ ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ ১৪৭ বার পঠিত
কোরআন ও বিজ্ঞানের আলোকে ঘূর্ণিঝড়

ঘূর্ণিঝড়, অতি বৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা, কখনো কখনো এগুলো আজাব হিসেবে নিপতিত হয়। যেগুলো মানুষের কৃতকর্মেরই ফল। মানুষের পাপাচারের কারণেই জলে-স্থলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এটা মহান আল্লাহরই কথা। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।’ (সুরা রোম, আয়াত : ৪১)

তবে মহান আল্লাহ মানুষের সব পাপের জন্যই বিপর্যয় দেন না, বেশির ভাগই তিনি ক্ষমা করে দেন। যদি তা না হতো, তাহলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বই থাকত না। এ জন্য মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৩০)

যেসব বিপদাপদ বা বিপর্যয় দিয়ে মহান আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করেন, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ঘূর্ণিঝড়। বিজ্ঞানের ভাষায় ঘূর্ণিঝড় বা ঘূর্ণিবার্তা হলো ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি। বজ্র  ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাসসংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপ মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। এ ধরনের ঝড়ে বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ করা হয়েছে ঘূর্ণিঝড়।


বাতাসের তীব্রতা ও গতির ভিত্তিতে ঘূর্ণিঝড়ের শ্রেণি বিভাজন করা হয়। যেমন: ১. নিম্নচাপ-বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০ থেকে ৫০ কিলোমিটার। ২. গভীর নিম্নচাপ বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১.৮৪ থেকে ৬১.৫৬ কিলোমিটার। ৩. ঘূর্ণিঝড় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১.৫৬ থেকে ৮৭.৪৮ কিলোমিটার। ৪. প্রবল ঘূর্ণিঝড় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯.১ থেকে ১১৮.২৬ কিলোমিটার। ৫. হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৯.৮৮ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার আজাবের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। মানুষের পাপের কারণে তারা যেকোনো সময় যেকোনো বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। এমনকি যে বাতাস ছাড়া তারা থাকতে পারে না, যে বাতাস তাদের প্রশান্তি দেয়, সেই বাতাসই প্রবল ঝোড়ো হাওয়ার রূপ নিয়ে তাদের সব কিছু তছনছ করে দিতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি নিশ্চিত রয়েছ যে তিনি তোমাদের পৃথিবীর কোথাও ভূ-গর্ভস্থ করবেন না কিংবা তোমাদের ওপর কঙ্কর বর্ষণকারী ঝোড়ো হাওয়া (ঘূর্ণিঝড়) প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা তোমাদের কোনো কর্মবিধায়ক পাবে না।’ (বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৬৮)

প্রবল বেগে ঘূর্ণিঝড়ের বাতাস বইবার সময় কখনো ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের পারিপার্শ্বিক বাতাস ঘর্ষণ খেয়ে বিদ্যুত্চ্ছটার সৃষ্টি করে ও তাতে বিচ্ছুরিত হয় আলোকরশ্মি। একে বলা হয় ‘সেন্ট এলমোর ফায়ার’। ১৯৬০ সালের চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ উপকূলের এবং ১৯৯১ এর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সময় এ ধরনের অগ্নিঝড় মানুষ দেখতে পেয়েছিল। যাতে গাছের পাতা-পল্লব পর্যন্ত পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু আবহাওয়া বিজ্ঞানে এ ধরনের ‘অগ্নিক্ষরা ঘূর্ণিঝড়’ বলে কোনো শব্দ নেই। অথচ কোরআনে এ ধরনের দুর্যোগেরও বর্ণনা পাওয়া যায়।


পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে তার এমন একটা খেজুর ও আঙুরের বাগান হোক, যার নিচ দিয়ে ঝরনাধারা প্রবাহিত, তার জন্য তাতে সব রকম ফল আছে, আর তার বার্ধক্যও সমুপস্থিত, তার কতকগুলো সন্তান-সন্ততি আছে যারা কাজকর্মের লায়েক নয়, এ অবস্থায় বাগানের ওপর অগ্নি হাওয়া বয়ে গেল, যার ফলে সেটি জ্বলে গেল? আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনসমূহ এভাবে বর্ণনা করছেন, যাতে তোমরা চিন্তা করে দেখো। ( সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৬)

এ ধরনের ঝড় বেশির ভাগ মরুভূমিতে হয়। মরুভূমিতে সংঘটিত এ প্রকারের ঝড়কে বলা হয় ‘লুহাওয়া’।

অতএব এ ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচতে আমাদের উচিত সতর্ক হওয়া, বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। পাপের পথ থেকে ফিরে আসা। মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। পরিবেশের ক্ষতি না করা। কারণ অহেতুক পরিবেশের ক্ষতি করাও বান্দার হক নষ্ট করার শামিল। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। পাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।