আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-
লিখিত অঙ্গীকার দিয়েও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকনকে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ‘তিরস্কৃত সংবর্ধনা’ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৯ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই ‘সংবর্ধনা’ দেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ব্যঙ্গার্থক লেখা সংবলিত বিভিন্ন ধরনের ফ্যাস্টুন ও পোস্টার ছিল।
‘দুই মাস কেটে গেল কেউ কথা রাখেনি, ভালোবাসেনি’; ‘ঘাস কাটা কর্তৃপক্ষ’ ইত্যাদি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে তখন জেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিং চলছিল।
রবিবার দুপুরে মিটিং থেকে বের হতেই জেলা প্রশাসনের চেম্বারের সামনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকনের পাশে দাঁড়ান। তাকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। আকস্মিক ফুলেল সংবর্ধনায় প্রথমে কিছু বুঝে না ওঠায় বেশ উৎফুল্ল দেখায় তত্ত্বাবধায়ককে। কিন্তু পরক্ষণে প্ল্যাকার্ডের লেখা পড়ে তিনি নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। এমন কাণ্ডের কারণ জানতে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির মুখপাত্র জান্নাতুল তহুরা তন্নী এবং সদর উপজেলা কমিটির সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম মুহি সংবর্ধনা দেওয়ার কারণ জানান। তবে নিরুত্তর থাকেন তত্ত্বাবধায়ক। দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখা থেকে জানানো হয়, ২৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, স্টাফ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকট চরমে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম অপ্রতুল। ফলে কুড়িগ্রামবাসী মানসম্মত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া, ওষুধের ঘাটতি, পরিচ্ছন্নতার অভাব ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্যসহ নানা সমসায় হাসপাতালটি জর্জরিত। তত্ত্বাবধায়ক দুই মাসে হাসপাতাল সংস্কারের কথা দিলেও, চোখে পড়ার মতো কোনও উন্নতি হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির মুখপাত্র জান্নাতুল তহুরা তন্নী বলেন, ‘জেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল হাসপাতালটি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিজেই ব্যধিগ্রস্ত। সেখানে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বলতে কিছুই নেই। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় একাধিকবার হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ককে সেবার মান উন্নয়নের জন্য অনুরোধ করা হয়। দাবি আদায়ে মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচিও পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তিনি দুই মাস সময় নেন। কিন্তু সেই সময় অতিবাহিত হলেও স্বাস্থ্যসেবার ন্যূনতম উন্নয়ন তো হয়ইনি বরং আরও অবনতি হয়েছে। এরই প্রতিবাদে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে তিরস্কারসূচক এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।’
তন্নী আরও বলেন, ‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সংকট দ্রুত সমাধান করতে হবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার নিশ্চয়তার পাশাপাশি হাসপাতাল পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।’
এ ব্যাপারে জানতে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।