স্কুল, কলেজ, চাকরি ও সংসার। মনে মনে এই চারটি শব্দ একবারে আওড়ে দেখুন তো, মনে হয় এক নিমেষে কতগুলো বছর কেটে গেল! তারপর অকারণেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। পরের মুহূর্তেই মনে ভিড় করে কোমর ব্যথা, ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়াম, চোখের তলায় কালি, ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ আর একাকীত্ব।
সবসময় ‘আর কী বা হবে’ টাইপের মনোভাব। অবশেষে সিদ্ধান্ত, ‘বয়েস হয়ে গিয়েছে।’ আদতে কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। একটু ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখলে বুঝতে পারবেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভালো থাকাটা আরও সহজ।
কারণ, ততদিনে আপনি আপনার চারপাশের অনেকটাই দেখে-বুঝে নিয়েছেন। দায়-দায়িত্বের পালা শেষ। তখনই সময় রিল্যাক্সড হয়ে জীবনটা উপভোগ করার। তবে এটা মনে রাখা দরকার, ভালো থাকা মানে কিন্তু মনে ও স্বাস্থ্যে দু’ভাবেই ভালো থাকা। তাই বয়স বাড়লেও কীভাবে সুস্থ এবং সুন্দর থাকবেন, তা নিয়েই এবারের কিছু পরামর্শ। লিখেছেন শারমিন রহমান।
মানসিকভাবে স্বাভাবিক থাকুন
মানুষের জীবনের এ সময়টিতে হতাশা আর বিষণ্ণতা বোধ হওয়া খুব স্বাভাবিক। আর সে কারণেই আমরা যদি অনেক আগে থেকে এ সময়টির জন্য কিছু মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করি, তাহলে খুব ভালো হয়। অবসর নেওয়ার পর কিছু সমাজসেবামূলক কাজ করতে পারলে সময়ও ভালো কাটে আর একই সঙ্গে অনেক সন্তুষ্টি আসে। যেমন—আমরা নিজের প্রতিবেশী শিশুদের নিয়ে ক্লাব তৈরি করতে পারি, যেখানে তারা পড়ালেখার বাইরে যে বিষয়গুলো শেখার আছে, সেগুলো চর্চা করতে পারে। এ ছাড়া সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উপকার হয়, এমন কিছু কাজের কথাও ভাবা যেতে পারে।
যেহেতু, এ বয়সে অনেক অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান সঞ্চয় হয়, তাই আগামী দিনের নাগরিকদের সঙ্গে তা শেয়ার করলে তাদের অবশ্যই অনেক উপকার হবে এবং সেই সঙ্গে আমরাও তাদের কাছ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান নিতে পারি। নিজের জীবনকে সব পর্যায়ে অর্থপূর্ণ করে তোলার দায়িত্ব কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেই নিতে হবে। কারণ, আশপাশের মানুষগুলো তো সবসময় আমাদের চাহিদা বুঝে চলবে না। বর্তমান যুগের জীবনযাত্রায় এত জটিলতা তৈরি হয়েছে যে, আপন মানুষদেরও এতটা সময় থাকে না নিজেদের দায়িত্বগুলো পালন করে অন্যদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার। এ ছাড়া প্রথম জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হলে অবসর নেওয়ার পর তাদের খুব ভালো সময় কাটে। আপনাদের দুজনের মধ্যে প্রথম থেকে কতটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, সেটা ভেবে দেখতে পারেন। কিছুটা সুস্থ বিনোদন এবং অর্থপূর্ণ কার্যক্রমের ভেতরে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারেন। এ জন্য বয়স্ক লোকদের দল বা সংঘ তৈরি করা খুব প্রয়োজন।
সম্পর্কগুলো সহজ করে তুলুন
প্রাথমিকভাবে আমাদের ভালো থাকা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের চারপাশের সবাই কী রকম রয়েছে তার ওপর। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই নির্ভরতা আরও একটু বেড়ে যায়। নির্ভরতা থেকেই তৈরি হয় এক ধরনের অধিকার-বোধ। প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। এ সম্পর্কের ভিত কোনো কোনো ক্ষেত্রে মজবুত আবার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি দুর্বল। অন্য সকলের সাথে যেমনই হোক না কেন, পিতা-মাতা ও সন্তানের মাঝে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ দুর্বলতা মেনে নেওয়া কঠিন। তা হলেও এই বাস্তবতাকেই মেনে নিতে হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমাজকে। সন্তান বাবা-মায়ের কাছ থেকে ছিন্ন হয়ে পড়ে। কখনও কখনও হয়ে পড়ে অচেনাও। বাধ্য হয়ে শেষ বয়সে তাদের বরণ করতে হয় একাকীত্ব! অচেনা হওয়ার বিষয়টি একটু সরিয়ে রাখলেও বাদবাকি চিত্র পৃথিবীর সকল সমাজেই কমবেশি পরিলক্ষিত হয়।
ছেলেমেয়ে বড় হয়ে নিজস্ব জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লে একটা ফাঁকা ফাঁকা ভাব মনে ভিতর তৈরি হয়। প্রায়ই মনে হয়, আপনি বোধহয় উপেক্ষিত। একাকীত্ব, মন খারাপ, উদাসীনতা, অপরাধ-বোধের মতো ব্যাপারগুলো চেপে বসে। বিরক্ত লাগছে, মেজাজ খিট খিট করছে । অস্বাভাবিক লাগতেই পারে। শিশুদের সাথে সময় কাটান মন খুব সহজেই ভালো হয়ে যাবে।
লাইফ স্টাইল পরিবর্তনে কিছু টিপস
*বন্ধুদের সঙ্গে কিছুদিন বেড়িয়ে আসার প্ল্যান করুন। মন ভালো হবে, নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাবেন।
*ম্যাগাজিন, নতুন গল্পের বই পড়ুন। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটানোর চেষ্টা করুন।
*নিয়মিত যোগাসন করুন।
*নিজস্ব হবি গড়ে তুলুন। নিজের পছন্দসই কোনো কোর্সেও ভর্তি হতে পারেন।
বয়স উপযোগী কিছু ব্যায়াম
ব্যায়াম দুই ধরনের হয়ে থাকেঃ ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ইনস্ট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজ, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ দৌড়, হাঁটা, দড়িলাফ, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি। এটা সাধারণত বেশি বয়সীদের করা উচিত। ইনস্ট্রুমেন্টাল এক্সারসাইজ উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা বেশি করে থাকে। তবে এক্সারসাইজ করার আগে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, ভুলে গেলে চলবে না আমাদের দেহের ভিতর লিভার, ফুসফুস, পাকস্থলী, হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। তাই এলোপাতাড়ি ব্যায়াম করে শরীর ঠিক রাখতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।