প্রকাশকালঃ
২৯ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২২ পূর্বাহ্ণ ১০৫৫৬ বার পঠিত
পবিত্র কোরআন মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ। সাধারণত এর আকৃতি লম্বায় আট ইঞ্চি ও চওড়ায় পাঁচ ইঞ্চি হয়ে থাকে। তবে অস্বাভাবিক বড় বা ছোট আকারের কপিও আছে। তেমনি আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় সংরক্ষিত কোরআনের একটি কপির সাইজ লম্বায় মাত্র দুই ইঞ্চি এবং চওড়ায় এক ইঞ্চি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোরআনগুলোর একটি বলে মনে করা হয়। ডাকটিকিট আকারের কোরআনটি বংশপরম্পরায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান মারিও পুরুসি।
সম্প্রতি বার্তা সংস্থা এএফপিকে পুরুসি বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের এই কপি নিয়ে আমাদের অনেক গল্প ও অলৌকিক ঘটনা আছে, যা আমার খুবই প্রিয়। আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তা অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করে রেখেছি। মাত্র দুই সেন্টিমিটার (০.৭ ইঞ্চি) চওড়া এবং এক সেন্টিমিটার পুরু কপিটি হাতের তালুতে রাখলে চোখের আড়াল হয়ে যায়। শুধু ছোট ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়েই তা পড়া যায়।’
বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোরআনের কপির সঠিক সময় নির্ধারণ করা কঠিন। অবশ্য তিরানায় অবস্থিত বেদের ইউনিভার্সিটির কোরানিক স্টাডিজের গবেষক এলটন কারাজ বলেছেন, ‘কোরআনের কপিটি খুবই ছোট বিন্যাসে মুদ্রিত হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে ছোট কোরআনের কপিগুলোর একটি। এর বাহ্যিক অবয়ব থেকে মনে হয়, ৯০০ পৃষ্ঠার কপিটি ১৯ শতকের শেষের দিকে প্রকাশিত হয়েছে। সত্যিই তা অসাধারণ মূল্যবান ও কাজ। সৌভাগ্যবশত এই অনুলিপিটি আলবেনিয়ায় রয়েছে।’
শুধু ছোট আকৃতির কারণেই কোরআনের কপিটি গুরুত্বপূর্ণ তা নয়; বরং পুরুসি পরিবারের ক্যাথলিক থেকে ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে কোরআনের এই কপির ভূমিকা আছে। এ বিষয়ে পুরুসি বলেন, আমার দাদার দাদা-দাদি কসোভোর জাকোভিকা অঞ্চলে একটি নতুন বাড়ির জন্য মাটি খনন করেন। সেখানে তারা নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত একটি মৃতদেহ পান। আর তার বুকের ওপর কোরআনের কপিটি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।’ তার পরিবার এটিকে অলৌকিক নিদর্শন হিসেবে মনে করে ইসলাম গ্রহণ করে।
১৯৩০ সালের দিকে পুরুসির দাদা রাজা জোগের সেনাবাহিনীতে একজন অফিসার ছিলেন। আরবি ভাষা জানা থাকায় তাঁর দাদা প্রতি রাতে বন্ধুদের ঘরে আমন্ত্রণ জানিয়ে কোরআন পাঠ করতেন। এনভার হোক্সার শাসন শুরু হলে সব ধরনের ধর্মীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয় এবং ধর্ম পালনকারীদের জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু তখন কোরআনের সেই কপিটি ছোট হওয়ায় সংরক্ষণ করা সহজ হয়। পুরুসি বলেন, ‘অবশ্য কারো মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, আমাদের একটি ছোট কোরআনের কপি আছে। কিন্তু তা এতই ছোট ছিল যে আমার বাবা তা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। আর পুলিশ এসে পুরো ঘর তল্লাশি করেও ব্যর্থ হয়।’
পরবর্তী সময়ে পুরুসির বাবা স্কেন্ডার কয়লাভর্তি লরিতে করে সীমান্তের ওপারে এক প্রতিবেশী বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেন। ১৯৯৯ সালে কসোভো যুদ্ধকালে ধ্বংস থেকে সুরক্ষিত রাখতে তা মাটির নিচে রাখা হয়। এরপর তাঁর বাবা আবার তা উদ্ধার করেন। ২০১২ সালে বাবার মৃত্যুর আগে পুরুসি উত্তরাধিকারসূত্রে কোরআনের কপিটি লাভ করেন।
পুরুসির স্ত্রী ব্লেরিনা বলেন, ‘যতবার আমি তা স্পর্শ করি আমার অন্তরে এর প্রভাব অনুভব করি। যখন কোনো ভুল হয় বা আমাদের মেয়ে অসুস্থ হয় আমরা কিছুটা স্বস্তিবোধ করি। কেননা আমরা জানি, কোরআন আমাদের রক্ষা করবে। তা সত্যিকারের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।’ জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা থেকে পরিবারের কাছে তা বিক্রির অনেক প্রস্তাব আসে। পুরুসি বলেন, ‘আমি তা বিক্রির কথা ভাবতে পারি না। তা আমাদের পরিবারের সংরক্ষণে রয়েছে এবং আমাদের সঙ্গেই সব সময় থাকবে।