সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, চট্টগ্রাম:-
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় ব্যাটারিচালিত লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে কাটগড় এলাকার বিমানবন্দর সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, অভিযানে অংশ নেওয়া বন্দর ট্রাফিক জোনের কনস্টেবল নজরুল ইসলাম ওই সময় রেকার অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযানের সময় এক অটোরিকশা থামানোর নির্দেশ দিলে চালক তা অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশ গাড়িটি আটক করলে চালক উত্তেজিত হয়ে আশপাশের অন্যান্য অটোরিকশাচালকদের উসকে দেয়। মুহূর্তেই প্রায় ৫০-৬০ জন চালক সেখানে জড়ো হয়ে কনস্টেবল নজরুলের ওপর হামলা চালায় এবং জব্দ করা অটোরিকশাটি ছিনিয়ে নেয়। এ সময় পুলিশের গাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়।
পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী আহসান হাবীব বলেন, “একজন ট্রাফিক কনস্টেবলের ওপর হামলা ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। ছিনিয়ে নেওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না—দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।”
বন্দর ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা কমিশনার স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করছিলাম। নগরীতে লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। কিন্তু অভিযানে গেলেই কিছু চালক উল্টো পুলিশের ওপর চড়াও হয়। এ ঘটনাও তারই উদাহরণ।”
চট্টগ্রাম নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড, আকবরশাহ ও ডবলমুরিং এলাকায় প্রতিদিন কয়েক লাখ লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা রাস্তায় চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অননুমোদিত যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
নগরের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পুলিশের ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি নগরীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। বন্দর ইপিজেড পতেঙ্গা সচেতন নাগরিক সমাজের এক সদস্য বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অসম্মান দেখানো মানে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ও আইনের শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।”
এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার ভিত্তিতে হামলাকারীদের শনাক্তের কাজ চলছে। পুলিশের দাবি, দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এমন অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের সাহস না পায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণহীন সম্প্রসারণ এখন নগরজীবনের এক জটিল সংকটে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালালেও প্রভাবশালী রিকশা মালিক সমিতির ছত্রছায়ায় এ খাতটি দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। এখনই যদি সরকার ও সিএমপি যৌথভাবে কঠোর নীতি না নেয়, তবে নগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।