বিনা দোষে ১৬ বছর কারাবন্দি, বাড়ি ফিরে মাকে পেলেও বাবার দেখা মেলেনি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪৩ অপরাহ্ণ   |   ১০৩ বার পঠিত
বিনা দোষে ১৬ বছর কারাবন্দি, বাড়ি ফিরে মাকে পেলেও বাবার দেখা মেলেনি

ঢাকা প্রেস,আখাউড়া প্রতিনিধি:-

 

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কেন্দুয়াই গ্রামের হাবিলদার মো. সোলায়মান মিয়া (৬৪)। ১৬ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে তিনি নিজ বাড়িতে মায়ের কোলে ফিরে আসেন। তাকে দেখতে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধু-বান্ধবরা ভিড় করেন।
 

হাবিলদার সোলায়মান মিয়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কেন্দুয়াই গ্রামের মৃত ফজলুল হক সরদারের ছেলে। তবে বাড়ি ফিরে মায়ের কোলে ফিরলেও বাবা আর ফিরে আসেননি। বাবা না পেয়ে সোলায়মান মিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, “টানা ১৬ বছর কারাবন্দি জীবন কাটিয়ে বাবাকে হারিয়েছি, তাকে আর শেষবারের মতো দেখতে পারিনি। বাবার কবরে এক মুঠো মাটিও দিতে পারিনি। এই কষ্টের চাইতে বড় কষ্ট আমার জীবনে আর কিছু নেই। এই দীর্ঘ বন্দি জীবনে তিন চাচা, দুই মামা, দুই মামি এবং তিন চাচাতো ভাইকে হারিয়েছি, এই কষ্ট কোথায় রাখব?”
 

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময় তিনি পিলখানা সদর রাইফেল ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৪ মার্চ তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই বছরের আগস্টে তার বাবা মারা যান, তবে সোলায়মান মৃত্যুর খবর পায় দেড় মাস পর।
 

তিনি আরও জানান, ২০১৩ সালের নভেম্বর ৫ তারিখ বিডিআর হত্যা মামলায় তিনি খালাস পান, তবে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তাকে আটক রাখা হয়। সোলায়মান বলেন, “পিলখানার ঘটনার দিন আমি ভিতরে ডিউটি করছিলাম। আমি কোনওভাবেই ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলাম না, ওই সময় আমি শুধু নিজের জীবন বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিলাম।”
 

“বিনা অপরাধে ১৬ বছর অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, তাই বাবার মৃত্যুর খবর পেতে দেড় মাস লেগেছে। জন্মদাতা পিতাকে হারিয়ে বড় কষ্ট পেয়েছি,” বলে তিনি জানান।
 

সোলায়মান মিয়া বলেন, “আমি চাই, যাদের অপরাধ ছিল, তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তাদের বিচার করা হোক। যদি আমি দোষী হই, তবে আমারও বিচার হোক। যারা এখনও বিনা দোষে কারাবন্দি আছেন, তাদের মুক্তি দেওয়া হোক।” ১৬ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়ায় তিনি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এবং বর্তমান সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানান এবং হারানো চাকরি ফিরে পেতে এবং পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
 

হাবিলদার সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর দুই ছেলেকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। টাকার অভাবে স্বামীকেও ঠিকমত দেখতে যেতে পারিনি। অন্যের কাছে ধার করে সংসার চালিয়েছি। ১৬ বছর আমি কীভাবে অন্ধকার জীবনে দিন কাটিয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আজ স্বামীকে মুক্ত হতে দেখে আমি খুব খুশি।”
 

সোলায়মান মিয়ার ছোট ভাই ইসমাইল সরদার জানান, “দীর্ঘ ১৬ বছর পর ভাই বাড়ি ফিরেছে, এতে আমরা খুশি। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, বড় ছেলে হয়েও ভাই বাবার মৃত্যুর সময় পাশে থাকতে পারেননি। তাকে কবরেও এক মুঠো মাটি দিতে হয়নি। আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যেন ভাই তার চাকরি জীবনের প্রাপ্য অধিকার পান।”
 

হাবিলদার সোলায়মান মিয়ার ৮০ বছরের বৃদ্ধ মা জুলেখা খাতুন ছেলের মুক্তিতে অত্যন্ত খুশি। তিনি বলেন, “ছেলের মুক্তির জন্য প্রতিদিন নামাজে দোয়া করতাম। আমি কখনো ভাবিনি, জীবনে ছেলেকে আবার কাছে পাব। আজ আমি অনেক খুশি, আমার ছেলে আমার কোলে ফিরে এসেছে।”