ঈশ্বরদী (পাবনা): লিচুর রাজধানী হিসেবে খ্যাত ঈশ্বরদীতে এবার উৎপাদনে ধস নেমেছে। প্রতিবছর এই সময়ে হাটবাজার লিচুর ঘ্রাণে মুখর থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। কৃষি বিভাগ ও চাষিরা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন ফলন বিপর্যয়ের, যা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে বাজারে যে লিচু পাওয়া যাচ্ছে, তা মূলত স্থানীয় জাতের দেশি বা ‘আঁটি লিচু’। এসব লিচু স্বাদ ও গুণগত মানে পিছিয়ে, তেমন রসালোও নয়। তবে মৌসুমের শুরু হওয়ায় নতুন ফলের স্বাদ নিতে অনেকেই কিনছেন। লিচুর চাহিদা মেটাতে বাজারে উঠেছে অপরিপক্ব লিচুও, যার দামও তুলনামূলকভাবে চড়া। ১০০ লিচুর এক আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।
ফলন বিপর্যয় ও বাজার পরিস্থিতি
ঈশ্বরদী পৌর শহরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেশি লিচুর বেচাকেনা শুরু হলেও কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মুখে হতাশার সুর। মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি আমিরুল ইসলাম সরদার বলেন, “এবার গড়ে ২০-৩০ ভাগ গাছে লিচু ধরেছে। অতীতে কখনো এমন ফলন দেখিনি। বাজারে যা এসেছে, তা দেশি লিচু – সুস্বাদু নয়, তবু মানুষ কিনছে।”
রূপপুর গ্রামের প্রবীণ চাষি জালাল উদ্দিন জানান, “৫০ বছরের অভিজ্ঞতায় এমন ফলনহীনতা দেখিনি। বাজারে বেচাকেনাও খুব কম। ফলে লিচুর প্রকৃত মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই বাজারে উঠেছে অপরিপক্ব লিচু।”
আওতাপাড়া ও জয়নগর শিমুলতালা বাজারের আড়তদার এবং ঈশ্বরদী ফল ভাণ্ডারের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, “বোম্বাই লিচু আসতে আর ৩-৪ দিন লাগবে। এখন যা আসছে তা আঁটি লিচু। মানভেদে দামও বেশি।”
আবহাওয়াজনিত কারণে ধস
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর ঈশ্বরদীতে প্রায় ৩,১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। জাতের মধ্যে রয়েছে মোজাফ্ফর (দেশি), বোম্বাই ও চায়না থ্রি। তবে উৎপাদন আশানুরূপ নয়। প্রথমদিকে মুকুল আসার সময় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় অর্ধেকেরও বেশি গাছে মুকুল আসেনি। পরে তীব্র তাপপ্রবাহে গাছ থেকে ঝরে পড়েছে লিচুর গুটি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা সরকার জানান, “চলমান তাপপ্রবাহে লিচু গাছ থেকে ব্যাপক হারে ফল ঝরে পড়েছে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি আরও এক সপ্তাহ চললে উৎপাদন আরও ৩০ ভাগ কমে যেতে পারে। আমরা চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি, বিশেষ করে সেচ ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে।”
প্রত্যাশা বোম্বাই লিচুকে ঘিরে
চাষি ও ব্যবসায়ীদের আশা, আগামী ২৫ মে থেকে বাজারে আসবে ঈশ্বরদীর বিখ্যাত রসালো বোম্বাই ও চায়না থ্রি জাতের লিচু। এই জাতগুলোর সুস্বাদু বৈশিষ্ট্য এবং দেশজুড়ে চাহিদার কারণে তখন বাজারে লিচুর বেচাকেনা গতি পাবে বলে তারা মনে করছেন।