পাউরুটির বিয়ার তৈরি হচ্ছে জার্মানিতে

প্রকাশকালঃ ১০ জুন ২০২৩ ০৬:১২ অপরাহ্ণ ২০৬ বার পঠিত
পাউরুটির বিয়ার তৈরি হচ্ছে জার্মানিতে

জকের যুগে প্রায় সব ক্ষেত্রেই টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব প্রক্রিয়া চালু করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এবার জার্মানিতে বাসি পাউরুটি দিয়ে বিয়ার ব্রিউয়িং সেই প্রবণতার অংশ হয়ে উঠছে। স্বাদে কিন্তু কোনো আপোশ করা হচ্ছে না।

বিয়ার বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় উত্তেজকগুলির মধ্যে পড়ে। সোনালী এই পানীয় তৈরি করতে উপাদান হিসেবে মল্ট, হপস, পানি এবং ইস্ট লাগে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াকে আরও সৃজনশীল করে তুলতে কিছু মানুষ ‘ব্রেড বিয়ার’ তৈরি করছেন।

বাসি রুটি দিয়ে বিয়ার? সেটা কি আদৌ সম্ভব? বার্লিনের এক বিয়ার প্রস্ততকারক সেই প্রক্রিয়া জানেন। মিশায়েল লেম্বকে এমন বেকিং পণ্য দিয়ে অ্যালকোহল-মুক্ত বিয়ার তৈরি করেন, যা সাধারণত ফেলে দেওয়া হতো। 


এমন ভাবনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘খাবারের অপচয় ও টেকসই প্রক্রিয়া আজ বিশাল চর্চার বিষয় হয়ে ওঠায় আমাদের মাথায় ব্রেড বিয়ারের আইডিয়া এসেছিল। বিশেষ করে বিশাল পরিমাণে পাউরুটি তৈরি করা হয়, যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শেষ পর্যন্ত শুকরের খোরাক হিসেবে অথবা বায়ো গ্যাস প্লান্টে কাজে লাগাতে হয়। সেটা সত্যি দুঃখের বিষয়। সে কারণে আমরা এই বিয়ারের উপাদান হিসেবে পাউরুটিও ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। এভাবে বিষয়টির প্রতিও মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছিলাম।’’

যে সব ব্রিউয়ারি পাউরুটি দিয়ে বিয়ার উৎপাদন করে, তারা আসলে যতটা সম্ভব সম্পদ পুনর্ব্যবহার করতে এবং বর্জ্য এড়াতে চায়। প্রায় ২৭,০০০ বোতল ব্রেড বিয়ার তৈরি করতে প্রায় ৭৫ কিলোগ্রাম বাসি পাউরুটির প্রয়োজন হয়। বার্লিনের মাস্টার বেকার টেও ক্যোস্টার নিখুঁতভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা করলেও কিছু অবশিষ্ট থেকেই যায়। তবে সব ধরনের রুটি বিয়ার তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়। 


মাস্টার বেকার হিসেবে টেও ক্যোস্টার বলেন, ‘‘সেই পাউরুটি এমন হতে হবে, যার মধ্যে শস্য ছাড়া অন্য কোনো উপাদান থাকবে না। অর্থাৎ কিশমিশ, বাদাম, তেলের বীজ থাকলে চলবে না। কারণ গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটবে এবং এমন সুস্বাদু বিয়ার তৈরি হবে না।’’


পাউরুটি দিয়ে পানীয় তৈরি মোটেই নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। কয়েক’শো বছর ধরে সেই ধারা চলছে। যেমন মিশরের ‘বোজা' বা মধ্যযুগে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের ‘কোয়াস'। বিগত কয়েক বছরে ব্রেড বিয়ারের পুনর্জন্ম ঘটেছে। ফলে মিশায়েল লেম্বকের মতো ক্রাফট বিয়ার ব্রিউমাস্টারের মাথায় নতুন আইডিয়া আসছে। তিনি প্রথমে বাসি পাউরুটির ছোট ছোট টুকরো করছেন এবং ব্রিউয়িং প্রক্রিয়ার শুরুতেই সেই মণ্ড যোগ করছেন। 

জটিল প্রক্রিয়ার ধাপগুলি বর্ণনা করে মিশায়েল বলেন, ‘‘এই ম্যাশ টুনে আমরা পানি ও মল্ট গ্রিস্ট মেশাই। এনজাইম সক্রিয় করে তোলা হয়, যা তারপর মাড় থেকে শর্করা তৈরি করে। সেই প্রক্রিয়ার জন্য প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। এই বিয়ারের বিশেষত্ব হলো এই যে, আমরা মণ্ডের মধ্যে পাঁচ শতাংশ পাউরুটি দেই। তারপর আমরা সেই মণ্ড পাম্প করে লটার টানে ঢুকিয়ে দেই। এখানে কঠিন ও তরল আলাদা করা হয়। সেই তরলই তথাকথিত ‘বিয়ার ওয়ার্ট', যা আমরা পরে ফোটাই।’’


তারপর শুধু ইস্ট যোগ করা হয়। ইস্ট সাধারণত শর্করাকে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত করে। তবে ব্রেড বিয়ারের ক্ষেত্রে সেটা করা হয় না। মিশায়েল লেম্বকে বলেন, ‘‘এই অ্যালকোহল-মুক্ত ব্রেড বিয়ারের জন্য আমরা বিশেষ ধরনের ইস্ট ব্যবহার করি, যা শুধু চিনি গাঁজন করতে পারে। উদ্বৃত্ত চিনি বিয়ারেই থেকে যায়। ফলে বেশি অ্যালকোহল সৃষ্টি হয় না।’’

জার্মানিতে কোনো পানীয়র মধ্যে অ্যালকোহলের মাত্রা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ পর্যন্ত থাকলে সেটিকে অ্যালকোহল-ফ্রি হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্রিউয়িং প্রক্রিয়ার পর বিয়ার শুধু বোতলে ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেই ব্রেড বিয়ারের স্বাদ গ্রাহকদের ভালোই লাগে।

বর্জ্য এড়ানো ও কাচামাল সাশ্রয়ই হলো মূলমন্ত্র। ব্রেড বিয়ার দেখিয়ে দিচ্ছে, যে স্বাদের ক্ষেত্রে কোনো আপোশ না করেও বিয়ার ব্রিউয়িং প্রক্রিয়াও টেকসইভাবে সাজানো সম্ভব।