ফটিকছড়িতে পারিবারিক বিরোধে ছেলের হাতে বাবার মর্মান্তিক মৃত্যু, আটক ৪ জন

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৯ জুলাই ২০২৫ ০৩:০১ অপরাহ্ণ   |   ৩৭ বার পঠিত
ফটিকছড়িতে পারিবারিক বিরোধে ছেলের হাতে বাবার মর্মান্তিক মৃত্যু, আটক ৪ জন

মোহাম্মদ করিম, বিশেষ প্রতিনিধি:-



চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের হাতে বাবা খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার পূর্ব-ফরহাদাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিকেলে বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে নিহত মো. এনাম (৬২) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

 

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মো. মোবারক হোসেন, স্ত্রী, কন্যা ও নিহতের শ্যালককে আটক করেছে পুলিশ। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
 

স্থানীয়রা জানান, নিহত এনাম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তার যথাযথ দেখভাল করতেন না। বৃহস্পতিবার এনাম তার একমাত্র মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে চলে গেলে রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে তার ছেলে মোবারক ও স্ত্রী গ্রামে রেখে নাজিরহাট শহরের বাসায় চলে যান।
 

পরদিন শুক্রবার সকালে মোবারক পুনরায় বাড়িতে ফিরে এসে দাবি করেন, তার বাবা নিখোঁজ। এরপর তিনি পাড়াপড়শিদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে দেন এবং বলেন, তার বাবাকে প্রতিবেশীরাই মেরে ফেলেছে। একপর্যায়ে তিনি প্রতিবেশীদের হুমকি দিতে থাকেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেন।
 

তবে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই তার আচরণে সন্দেহ পোষণ করেন। প্রতিবেশীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্ভবত বৃহস্পতিবার রাতেই এনামকে মারধর করে হত্যা করা হয় এবং লাশটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। সকালে মোবারক অভিনয় করে বাবাকে খুঁজছেন বলে নাটক করেন।
 

এক পর্যায়ে এলাকার লোকজন বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মোবারককে আটক করেন এবং পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে তাকে হেফাজতে নেয়। পরে এনামের লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
 

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জলিল বলেন, “বৃদ্ধ এনাম খুব ভালো মানুষ ছিলেন। অভাবের মধ্যেও সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার এমন করুণ পরিণতি কেউ কল্পনাও করেনি।”
 

আরেক প্রতিবেশী মো. শাহ জালাল বলেন, “বিশ্বাস হচ্ছে না—ছেলে আর পরিবারের হাতেই খুন হতে হলো ওই মানুষটাকে। যিনি সারা জীবন সন্তানের জন্য সংগ্রাম করেছেন, সেই সন্তানের হাতেই মৃত্যুবরণ করতে হলো তাকে।”
 

এ বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমেদ বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রধান অভিযুক্ত মোবারক হোসেনকে আটক করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী, কন্যা এবং শ্যালককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এনামের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।”
 

তিনি আরও জানান, নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ ছিল। এনাম এবং তার পরিবারের মধ্যে প্রায়ই বাকবিতণ্ডা হতো, যা ঘটনার দিনও হয়েছিল বলে জানা গেছে।
 

পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।