প্রকাশকালঃ
১৯ মার্চ ২০২৩ ০৫:২১ অপরাহ্ণ ৩৬৯ বার পঠিত
ফাতেমা আল-মাদ্রিদিয়া একজন মুসলিম নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ। তিনি বিখ্যাত মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী মাসলামা আল-মাদ্রিদির (মৃত্যু ১০০৮ খ্রি.) মেয়ে। একজন গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ ও অ্যাস্ট্রল্যাব প্রস্তুতকারক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর ফাতেমার একাধিক মৌলিক গবেষণা ও রচনা আছে।
ফাতেমা মাদ্রিদিয়ার জন্ম মুসলিম স্পেনের কর্ডোভায়। তবে তাদের আদিনিবাস মাদ্রিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাকে মাদ্রিদিয়া বলা হয়। অবশ্য তার বাবা মাসলামার জন্ম মাদ্রিদে। তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য কর্ডোভা যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন। তাকে বলা হতো স্পেনের প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী। খলিফা হাকাম মুস্তানসারের শাসনামলে তিনিই ছিলেন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে মাসলামা বহুমুখী অবদান রাখেন। যেমন জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর টলেমির বই গ্রিক থেকে আরবি করেন, আল-ম্যাজেস্ট্রির ভাষান্তর ও সংশোধন করেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক খাওরিজমির সারণির উন্নয়ন করেন, ভূমি জরিপ ও ত্রিকোণমিতির কৌশল উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া তিনি একটি বিশ্বকোষ সম্পাদনা করেন এবং গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আর এসব কাজে ফাতেমা ছিলেন তার বাবার অন্যতম সহযোগী। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন বাবার জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সঙ্গী।
খ্রিস্টীয় দশম শতকে কর্ডোভা ছিল মুসলিম স্পেনের প্রধান জ্ঞানকেন্দ্র ও ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ নগরী। মুসলিম আমলে এখানে বিশালায়তন মসজিদ, বিশ্ববিদ্যালয় ও জ্ঞানকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। তখন চার লাখের বেশি মানুষ বসবাস করত এই শহরে। গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যাসহ আধুনিক বিজ্ঞানের বহুমুখী চর্চা হতো কর্ডোভায়। ইউরোপ ও মুসলিম স্পেনের বহু জ্ঞানানুরাগী কর্ডোভায় জ্ঞানার্জনের জন্য আসত।
মধ্যযুগের মানুষের কাছে চাঁদ ও গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর অবস্থান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর ওপর ভিত্তি করে সময় গণনা, ইবাদতের সময় নির্ধারণ, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের সময়সূচি প্রণয়ন, সমুদ্রে নাবিকরা পথ নির্ণয় করত। তবে চাঁদ ও নক্ষত্রগুলোর অবস্থান নির্ণয় করা খুব সহজ ছিল না। গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা যায় এমন একটি অ্যাস্ট্রল্যাব তৈরি করেছিলেন ফাতেমা মাদ্রিদিয়া। জ্যোতির্বিদ্যা, ক্যালেন্ডার ও ত্রিকোণমিতির ওপর তার মৌলিক গবেষণা আছে। তার গবেষণাকাজগুলোকে একত্রে ‘কারেকশনস ফ্রম ফাতেমা’ বলা হয়।
ফাতেমা অ্যাস্ট্রল্যাবের ওপর একটি বিশদ গ্রন্থ (Treatise on the Astrolabe) রচনা করেন। যেখানে তিনি গ্রহ-নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ ও সেগুলোর গতিপথ গণনার পদ্ধতি সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। গ্রন্থটি বর্তমানে স্পেনের বিখ্যাত ‘এল এসকোরিয়াল’ পাঠাগারে সংরক্ষিত আছে। কর্ডোভা শহরকে মূলকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে ফাতেমা ও তার পিতা সময় গণনার একটি মানদণ্ড দাঁড় করিয়েছিলেন। বর্তমানে লন্ডনের গ্রিনিচ মানমন্দিরকে কেন্দ্র ধরে যেভাবে সময় হিসাব করা হয় ঠিক তেমন। তারা পারসিক বছর গণনার পদ্ধতি আরবিতে ভাষান্তর করেছিলেন এবং তাকে হিজরি সনের আদলে ঢেলে সাজিয়েছিলেন।
ফাতেমা মাদ্রিদিয়ার ভাষাগত দক্ষতাও ছিল ঈর্ষণীয়। তিনি আরবি, স্প্যানিশ, হিব্রু, গ্রিক ও লাতিন ভাষা বলতে, লিখতে ও পড়তে পারতেন। ইতিহাস গবেষক ম্যানুয়েল মারিন, যিনি স্প্যানিশ আরবদের নিয়ে গবেষণা করেন তিনি বলেছেন, ফাতেমা ছিলেন মুসলিম স্পেনের সেসব উজ্জ্বল নারী নক্ষত্রগুলোর একজন, যারা ইতিহাস তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন।