দেশের শেয়ার বাজারে টানা দরপতন, বিনিয়োগকারীদের হতাশা

প্রকাশকালঃ ২০ মে ২০২৪ ০৪:১১ অপরাহ্ণ ৭১০ বার পঠিত
দেশের শেয়ার বাজারে টানা দরপতন, বিনিয়োগকারীদের হতাশা

দেশের শেয়ার বাজারে টানা দরপতনে আতঙ্কে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। সূচকের অব্যাহত পতনে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাদের পিঠ রীতিমতো দেওয়ালে ঠেকে গেছে। গতকাল রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই মূল্যসূচকের বড়পতন হয়েছে। এ নিয়ে টানা ছয় কার্যদিবস সূচক কমল বাজারে। এ অবস্থায় এখন বিনিয়োগকারীদের জিজ্ঞাসা—কোথায় গিয়ে থামবে এ দরপতন? বাজার কি আর ভালো হবে না?

 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যে বাজারে কারসাজির সাথে উদ্যোক্তারা সরাসরি জড়িত থাকে, সে বাজার কীভাবে ভালো হয়? অনেক সিকিউরিটিজ হাউজ নিয়ম ভঙ্গ করে বিনিয়োগকারীদের বেশি মার্জিন ঋণ দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এসব দেখতে হবে। মার্কেটে শৃঙ্খলা না থাকলে বাজার কখনো আগাবে না। সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, শেয়ার বাজারে যেখানে ক্যাপিটাল (মূলধন) রক্ষা করা যায় না, সেখানে ক্যাপিটাল গেইনে ট্যাক্স বসানোর কথা বলা হচ্ছে? এসব কারণে বাজার নিয়ে আস্থা হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।


বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুলসংখ্যক কোম্পানির শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ান। এতে ক্রেতা সংকটে পড়ে প্রায় দুই শতাধিক কোম্পানি। দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনকৃত মোট ৩৮৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ২২টির, কমেছে ৩৪৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি কোম্পানির দর। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৮৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২০.৫২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৯১.৬৩ পয়েন্টে ও বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৫.৫৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সূচকের পাশাপাশি এদিন এই বাজারে লেনদেনও কমেছে।

 

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪০৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। যা গত ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক কার্যদিবসের ব্যবধানে গতকাল লেনদেন কমেছে ২৬৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। অন্যবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল লেনদেনকৃত মোট ২২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির, কমেছে ১৮৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির দর। এতে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬৯ পয়েন্ট। এদিন এই বাজারে লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

 

এদিকে টানা এ দরপতনে বাজার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের শীর্ষ একটি ব্রোকারেজ হাউজের একজন বিনিয়োগকারী বলেন, কী করব ভেবে পাচ্ছি না? বাজারে এখন অনেক ভালো শেয়ারের দরও কমে যাচ্ছে। লোকসান গুণতে গুণতে পিঠ একদম দেওয়ালে ঠেকে গেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই বাজার কি আর ভালো হবে না?


এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, এই মন্দা বাজারেও অনেক শেয়ার নিয়ে কারসাজি হচ্ছে। আর কারসাজির সঙ্গে উদ্যোক্তারাই জড়িত থাকে। তাহলে কীভাবে এই বাজার ভালো হবে? তিনি বলেন, অনেক সিকিউরিটিজ হাউজ নিয়ম না মেনে বিনিয়োগকারীদের বেশি পরিমাণে মার্জিন ঋণ দিচ্ছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এসব নিয়মের মধ্যে আনতে হবে।

 

আবু আহমেদ বলেন, যে বাজারে ক্যাপিটাল রক্ষা করা যায় না, সেখানে ক্যাপিটাল গেইনে ট্যাক্স বসানোর কথা বলা হচ্ছে। এসব কারণে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাজারের এ অবস্থা যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ, অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন অনেক কম। এসব শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে।

 

বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমানে বাজারে যে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে তা দূরীকরণে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো নীতিগত সহায়তা দরকার হয়, তাহলে কমিশন তা বিবেচনা করবে।