গণক ও জ্যোতিষী সম্পর্কে যা বলা হয়েছে হাদিসে

প্রকাশকালঃ ১৭ জুলাই ২০২৩ ০২:৫৭ অপরাহ্ণ ২০০ বার পঠিত
গণক ও জ্যোতিষী সম্পর্কে যা বলা হয়েছে হাদিসে

গায়েবের খবর একমাত্র মহান আল্লাহ জানেন। আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে না। দূর আকাশ থেকে শুরু করে সাগরের অন্ধকার তলদেশের সব খবর মহান আল্লাহর ইলমে আছে। পৃথিবীর একবিন্দু ধূলিকণাও তাঁর ইলমের বাইরে নেই।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর গায়েবের চাবি তাঁরই কাছে আছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সাগরের অন্ধকারে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত আছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। 

মাটির অন্ধকারে এমন কোনো শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোনো বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯) যদি কেউ দাবি করে যে সে গায়েবের খবর জানে, মানুষের ভাগ্য গণনা করে শতভাগ সত্য বলতে পারে সে মিথ্যাবাদী।


তাদের কথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ জন্যই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন— ‘অতএব, তুমি উপদেশ দিতে থাকো; কারণ তোমার রবের অনুগ্রহে তুমি গণক নও এবং উন্মাদও নও।’ (সুরা : নূর, আয়াত : ২৯)

কেউ যদি এ ধরনের লোকদের বিশ্বাস করে তার ঈমান ত্রুটিযুক্ত হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কেউ অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, এমনকি রাসুলও না।


সব গায়বের চাবিকাঠি তাঁর (আল্লাহর) কাছে, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না...।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না আল্লাহ ছাড়া...।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬৫)


এ ধরনের লোক অনেক চালাক হয়, তারা বিভিন্ন অলীক কথায় মানুষকে ভোলাতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কিছু কিছু কথা বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় অনেকে আবার তাদের অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। ফলে তাদের মিথ্যা কথায় প্রভাবিত হয়ে অনেক অনৈসলামিক কাজে জড়িয়ে পড়ে, প্রতারিতও হয়।

গণকদের কিছু কিছু বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যাওয়ার রহস্য নিয়ে রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাদের মূল কারসাজিটা সাহাবায়ে কেরামের সামনে পরিষ্কার করে দেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদল লোক রাসুল (সা.) এর নিকট জ্যোতিষীদের ব্যাপারে জানতে চাইল। সে সময় রাসুল (সা.) তাদের বললেন, ওরা (বাস্তব) কোনো কিছুর ওপরে (প্রতিষ্ঠিত) নয়। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! তারা তো প্রায় সময় এমন কিছু বিষয়ে (আগাম) কথা বলে, যা বাস্তব হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওই (একটি) কথা বাস্তব সত্যের অন্তর্ভুক্ত, যা জিনেরা চুরি করে নিয়ে আসে এবং মুরগির মতো কুট কুট করে তা তার দোসরের শ্রবণশক্তিতে ঢুকিয়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা তার সঙ্গে শতাধিক মিথ্যা জুড়ে দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭১০)


তাদের এসব মিথ্যাচারে মানুষ এতটা বিভ্রান্ত হয় যে তারা আল্লাহর ওপর আস্থা না রেখে গণকের মিথ্যাচার বিশ্বাস করতে থাকে, যা ঈমানকে ত্রুটিযুক্ত করে দেয়, মানুষের নেক আমল নষ্ট করে দেয়। মুহাম্মাদ ইবনে মুসান্না আনাযি (রহ.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর কতক স্ত্রীর সনদে নবী (সা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে লোক ‘আররাফ’ (গণকের) এর কাছে গেল এবং তাকে কোনো ব্যাপারে প্রশ্ন করল চল্লিশ রাত্রি তার কোনো নামাজ গ্রহণযোগ্য হবে না। (মুসলিম, হাদিস : ৫৭১৪)

অন্য হাদিসে গণকের কাছে যাওয়ার শক্ত বিরোধিতা করে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করল অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করল অথবা গণকের নিকট গেল এবং সে যা বলল তা বিশ্বাস করল, সে অবশ্যই মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিলকৃত জিনিসের (আল্লাহর কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করল।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬৩৯)

তাই মুমিনের উচিত গণকদের কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকা। নিজেকে এই পেশা থেকে দূরে রাখা। কেননা এই পেশার উপার্জন মুসলমানের জন্য হালাল নয়। আবু মাসউদ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) কুকুরের মূল্য, গণকের পারিশ্রমিক ও পতিতার উপার্জন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৪৬)