দরপত্রে বেশি প্রতিযোগিতা হলে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়ে

প্রকাশকালঃ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৭ অপরাহ্ণ ২২২ বার পঠিত
দরপত্রে বেশি প্রতিযোগিতা হলে দুর্নীতির প্রবণতা বাড়ে

দেশে সাধারণত সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। প্রকল্পের মান পর্যবেক্ষণের বিষয়টি অনালোচিত থেকে যায়। সরকারি ক্রয় বা কাজের দরপত্র প্রক্রিয়া প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে দেশের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দরপত্র প্রক্রিয়ায় বেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করলেই যে ভালো ফল পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। 

বৈশ্বিক ও দেশীয় অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই সর্বনিম্ন দরদাতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারে না। তখন খরচও বেড়ে যায়। এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যবহৃত দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ফাহাদ খলিল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।  


‘প্রতিযোগিতাভিত্তিক ক্রয় ও পরবর্তী ঝুঁকি’ শীর্ষক এই সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ফাহাদ খলিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘প্রতিযোগিতা মানেই যে ভালো, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দরপত্র প্রক্রিয়ায় যখন বেশি অংশগ্রহণকারী থাকে, তখন দুর্নীতির প্রবণতা বেড়ে যায়। কাজ পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তখন ঘুষ দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে; অর্থাৎ কে কত বেশি ঘুষ দিয়ে কাজ বাগাতে পারে, সেই প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে তারা। তাতে কাজের মান খারাপ হয়। কিন্তু আমাদের মতো দেশে সাধারণত সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। প্রকল্পের মান পর্যবেক্ষণের বিষয়টি অনালোচিত থেকে যায়।’ 

এই পরিস্থিতিতে ফাহাদ খলিলের পরামর্শ, কাজদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্র নিয়ে ব্যয় কত হতে পারে, তার একটা মূল্যায়ন নিজেরা করতে পারে; অর্থাৎ ব্যয়ের সীমা সম্পর্কে তারা আগে ধারণা নিতে পারে। তখন দরপত্রদাতাদের মধ্যে যারা সেই দরের চেয়ে বেশি দর দেবে, তাদের রেখে বাকিদের বাদ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আরেকটি পদ্ধতি হলো, প্রকল্পটি কয়েক ভাগ করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া।

এ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে এমআইটিতে হওয়া একটি পিএইচডি গবেষণার কথা বলেন ফাহাদ খলিল। তিনি জানান, কাজের ধরন অনুযায়ী দরদাতা প্রতিষ্ঠান বা সরকার সেটির একটি সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে। এরপর যেসব দরদাতা তার চেয়ে কম দর দেয়, তাদের দরপত্র জনসমক্ষে বাদ দেওয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে বাস্তবসম্মত দরপত্রগুলোই কেবল গৃহীত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখা গেছে, এই পদ্ধতিতে কাজের ব্যয় যেমন কমানো গেছে, আবার মানও নিশ্চিত হয়েছে। 


এ ছাড়া চিলি, চীন, জাপান, পেরু, সুইজারল্যান্ড ও তাইওয়ানে এই প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়। এসব দেশে নির্দিষ্ট দরের চেয়ে কম দর দিলে সেই সব দরপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, দেশে অনেক প্রকল্পই সময়মতো বাস্তবায়িত হয় না। বাস্তবায়নে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। সর্বনিম্ন দরদাতারাই অনেক বেশি সময় নেয়, তখন খরচও বেড়ে যায়। তবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দরদাতা বাছাই করার সঙ্গে মনিটরিং ব্যবস্থা রাখতে হবে, তার জন্য ব্যয় যতই হোক না কেন। ফাহাদ খলিল যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, তা দেশের বিদ্যমান ক্রয় প্রক্রিয়া সংশোধনের ক্ষেত্রে রসদ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি।