অনলাইন ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলেই জানানো হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে মাকে দেখতে কবে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান—এ বিষয়টা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে। গত কয়েকদিন ধরেই নানা গুঞ্জন ও চাওয়াসহ খবর ছড়িয়েছে যে, প্রায় ১৭ বছর পর তিনি দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
দিনভর নানা কণ্ঠে শোনা গেছে যে তারেক রহমান বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন। যদিও বিএনপি বা দায়িত্বশীল কোনো সূত্র এখনও বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। তবু দলীয় বিভিন্ন কণ্ঠ ও অনান্যান্য সূত্র বলছে—সন্ধ্যায় তিনি যুক্তরাজ্য থেকে রওনা দিয়েছেন এবং কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে আসার কথা আছে। এক সূত্রে বলা হয়েছে কাতার এয়ারওয়েজের যাত্রী তালিকায় একজন ভিআইপি আসছেন—এ ধরনের উল্লেখ রয়েছে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া এভারকেয়ার হাসপাতালে তিন স্তরের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে; সকাল থেকেই বিজিবি মোতায়েন রয়েছে। খবর আছে, সেনাবাহিনী আগামীকাল হাসপাতালের পাশে হেলিকপ্টার অবতরণের মহড়া চালাবে। এমন পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরে নেতা-কর্মীদের ভিড় এড়াতে এবং দ্রুত সুরক্ষিতভাবে হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য তাকে হেলিকপ্টারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে—এই গুঞ্জনও ছড়িয়েছে।
বিএনপি’র উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরছেন—তবে ঠিক কবে ফিরবেন সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে কিছু জানাচ্ছেন না, ফলে গুঞ্জনের মাত্রা বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত জানাতে দলের পক্ষ থেকে পরিস্কার বার্তা দেওয়া উচিত যাতে অপ্রয়োজনীয় কণ্ঠ কূট চলমান না থাকে।
গতকাল (১ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন—কিন্তু নির্দিষ্ট সময় জানায়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরায় কোনো বাধা দেখা যাচ্ছে না। দলের আইন উপদেষ্টাও বলেছেন যে তাঁর দেশে ফেরায় যে কোনো প্রকার আইনি বাধা আমার জানা নেই; তিনি ‘উপযুক্ত সময়ে’ ফিরবেন এবং ফিরলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’ করা হবে—এই আশ্বাসও পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্র, কিছু সিনিয়র নেতার সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়ির অচল, নীরব প্রস্তুতি দেখে ধারণা করা হচ্ছে—এই সপ্তাহেই তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তবে কৌশলগত কারণে দলের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট দিন-তারিখ প্রকাশ করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে সরকার ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করেছে এবং তার সুরক্ষায় বিশেষ সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী—স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৭৯ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে আনা হলে বুকে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং তাকে ভর্তি করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেক রহমান সপরিবারে লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং তারপর থেকে সেখানে অবস্থান করছিলেন। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা ছিল, যাদের মধ্যে পাঁচটি মামলায় সাজা ছিল। পরে আদালতের আইনি প্রক্রিয়ায় একটি করে করে এসব মামলা থেকে তিনি মুক্ত হন—দলীয় দাবি, এই মামলা-গুলো রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত ছিল।
এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ মেডিক্যাল টিম গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছেন। দলের নেতৃত্বে ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. রিচার্ড বিল। হাসপাতাল সূত্র বলছে, তারা প্রথমে সিসিইউতে গিয়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং স্থানীয় মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনা, অর্গান সাপোর্ট ও পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন।