তফসিল ঘোষণার আগেই অক্টোবরে টানা কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চায় বিএনপি

প্রকাশকালঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩১ অপরাহ্ণ ১৯১ বার পঠিত
তফসিল ঘোষণার আগেই অক্টোবরে টানা কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে চায় বিএনপি

ফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে একটি ফয়সালায় পৌঁছাতে চায় বিএনপি। 

নভেম্বরের শুরুতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, তার আগেই অক্টোবর মাসে টানা কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে সে চাপ তৈরি করাই এখন দলটির লক্ষ্য। তবে অক্টোবরের কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি। এ সপ্তাহের মধ্যে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।

এরই মধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিনগুলোকে হিসাবে নিয়ে ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপিকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কার্যত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া এই আলটিমেটামে কঠোর কর্মসূচির নামে বিএনপি যাতে কোনো ‘সংঘাত’ বা ‘সহিংস’ কর্মসূচিতে না যায়, সে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অক্টোবরের কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সরকারি দলের দিক থেকে বাধা-হামলার ঘটনা আরও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে বরাবরের মতো বিএনপির দেখাদেখি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ অক্টোবর মাসজুড়ে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি দলের আলটিমেটামের হুমকি মাথায় রেখেই বিএনপি চূড়ান্ত ধাপের কর্মসূচি ঠিক করতে পারে।

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করতে এবার শ্রমিকশ্রেণিকে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে আগামী শনিবার ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণে ‘শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন’ করছে দলটি। ‘ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, বাঁচার মতো মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হোন’ স্লোগানে এ সম্মেলন হবে। আয়োজকেরা বলছেন, এই সম্মেলন থেকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, লুটপাট, সর্বত্র দলীয়করণ, জাতীয় বেতন স্কেল, মজুরি কমিশন, সব ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ, পাট, চিনিসহ বন্ধ মিল–কারখানা চালুর দাবিসহ সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সম্মেলনের সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, ১৫টির বেশি শ্রমিক সংগঠনের ১০ হাজারের বেশি প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এ সম্মেলন থেকে শ্রমিক মহাসমাবেশের ঘোষণা আসতে পারে।


বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী অক্টোবর মাসকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন। এটি হবে তাঁদের দিক থেকে সরকারবিরোধী টানা আন্দোলন-কর্মসূচির শেষ ধাপ। বর্তমানে রাজধানী ঢাকা ঘিরে সমাবেশ ও অঞ্চলভিত্তিক রোডমার্চ কর্মসূচি চলছে। ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ১৫ দিনের এ কর্মসূচি ৫ অক্টোবর কুমিল্লা-ফেনী-মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে সমাবেশ থেকে পরবতী কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি আছে। চলমান আন্দোলনে শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে নতুন কর্মসূচি ঠিক করে ঘোষণা করা হবে।


২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন হলে আর হাতে সময় আছে তিন মাস। গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ‘এসপার-ওসপার’ ফয়সালায় পৌঁছাতে চাইছেন। তাঁরা মনে করছেন, তফসিল ঘোষণা করে সরকারি দল নির্বাচনী সড়কে উঠে গেলে সেখান থেকে ফেরানো মুশকিল হয়ে উঠবে। তাই তফসিলের আগে তা থামানো না গেলে পরে নির্বাচন ঠেকানো আরও কঠিন হবে।

এ অবস্থায় চলমান আন্দোলনের গতি বাড়াতে অক্টোবরে নতুন ধরনের কর্মসূচির চিন্তা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশ, সচিবালয় ঘেরাও, ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির প্রস্তাব এসেছে।

অবশ্য স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, কী কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা পরিস্থিতিই বলে দেবে। যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, তখন সে কর্মসূচি দেওয়া হবে।


বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি। এর প্রায় চার মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর ওই ভিসা নীতি কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ঘোষণার পর বিএনপি মাঠে সভা-সমাবেশ করার সুযোগ পায়। এখন দেশটির ভিসার বিধিনিষেধ কার্যকরের সিদ্ধান্তের পর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে চূড়ান্ত কর্মসূচির পথে এগোচ্ছে, যা অক্টোবরে শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩৬ দিনের সময়সীমা এসেছে।

এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ওরা (আওয়ামী লীগের নেতা) হুমকি দেবে, এটাই ওদের স্বভাব। এসব হুমকিতে কিছু যায় আসে না। এগুলো অন্তঃসারশূন্য। ওরা সন্ত্রাস করবে, নাশকতা করবে আর আমাদের ওপর দোষ চাপাবে—এগুলো এখন দেশেও কেউ বিশ্বাস করছে না, আন্তর্জাতিক বিশ্বও বিশ্বাস করছে না। ওদের ঘণ্টা বেজে গেছে। ওদের যেতে হবে, এটাই শেষ কথা।’