‘কিডনি বাজার’ নাটোরের গুরুদাসপুর, দরদাম এলাকায় প্রতিস্থাপন ভারতে

প্রকাশকালঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:২২ অপরাহ্ণ ১৮০ বার পঠিত
‘কিডনি বাজার’ নাটোরের গুরুদাসপুর, দরদাম এলাকায় প্রতিস্থাপন ভারতে

বাজারের মাছ-মাংসের মতো চলে দরদাম। এরপর বয়সভিত্তিক একটি প্রাথমিক দাম নির্ধারণ করা আছে সিন্ডিকেট থেকে। দরদামে মিলে গেলে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে রোগীর স্বজন সাজিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলায় এভাবে চলে কিডটি বেচাকেনা। যা প্রায় ওপেন সিক্রেট এলাকাবাসীরা কাছে। বয়সভিত্তিক কিডনির প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া আছে সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে। ২০ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত তরুণ-তরুণীদের প্রতিটি কিডনির দাম ছয় থেকে সাত লাখ টাকা।

আর মধ্যবয়সীদের কিডনির দাম কম। তাদের প্রতি কিডনির জন্য দেওয়া হয় দুই থেকে চার লাখ টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, এখন পর্যন্ত উপজেলার দুই শতাধিক মানুষ তাদের কিডনি বিক্রি করেছেন। অধিকাংশ কিডনি বিক্রেতা জানিয়েছেন, তারা ‘অভাবের কারণে’ কিডনি বিক্রি করেছেন।


গুরুদাসপুরের এই কিডনি সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় ঢাকা থেকে। এর নেতৃত্ব দেন সিরাজগঞ্জ জেলার তারাশ উপজেলার মোনায়েম হোসেন জেমস। তার হয়ে গুরুদাসপুরে কিনডি সংগ্রহের কাজ করেন আব্বাস ও রশিদ নামের দুই ব্যক্তি। তারা দরিদ্রদের টার্গেট করে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করেন।

তবে কিডনি বেচাকেনা নিয়ে কোনো তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কিডনি বেচাকেনার ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ 

কিডনি কেনাবেচার সত্যতা স্বীকার করেছেন চক্রের সদস্য উপজেলার আব্বাসের মোড় এলাকার রশিদ। তিনি জানান, জেমসের নেতৃত্বে কিডনি সিন্ডিকেট চলছে। তিনি ঢাকায় থেকে সব নিয়ন্ত্রণ করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কিডনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের টার্গেট করে কিডনি কেনার লোক ঠিক করা হয়। এরপর দরিদ্র মানুষদের টাকার লোভ দেখিয়ে কিডনি কেনা হয়। বাজারে তরুণদের কিডনির চাহিদা সবচেয়ে বেশি।


চক্রের আরেক সদস্য আব্বাস ওরফে কিডনি আব্বাস বলেন, ‘আমি নিজের কিডনি বিক্রি করেছি। এ জন্য অনেকেই আমার কাছে কিডনি বিক্রির বিষয়ে পরামর্শ চাইতে আসেন। কেউ এলে পরামর্শ দিই। তবে আমি চক্রের সাথে জড়িত না। জেমস ও রশিদ আমার নামে হিংসা করে মিথ্যা কথা বলেছে। এরা দুজনই মূল হোতা।’  

সম্প্রতি কিডনি বিক্রির জন্য রশিদের কাছে যান উপজেলার সাহাপুরের নজরুল ও তার মা। নজরুলের মা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেনার কারণে নজরুলের কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ জন্য রশিদের সাথে যোগাযোগ করি। রশিদ জানায়, ক্রেতা পাওয়া গেলে তিন থেকে চার টাকায় কিডনি কিনবে। ঢাকাতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হবে। বিক্রির কাজে কিডনি আব্বাস ও জেমস তাদের সহযোগিতা করবে।’

চাচকৈড় বাজারের মধ্যম পাড়া এলাকার খৈবার ও আরো কয়েকজন কিডনি বিক্রেতা জানান, তারা জেমস, রশিদ ও আব্বাসের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে গিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন। এ জন্য তাদের তিন থেকে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। অভাবের কারণেই তারা কিডনি বিক্রি করেছেন।

কিডনি বিক্রি করতে গিয়েও ফিরে এসেছেন একই এলাকার জিল্লুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিডনি আব্বাস ও জেমসের প্রলোভনে কিডনি বিক্রিতে রাজি হয়েছিলাম। পরে ভুল বুঝতে পেরে ফিরে এসেছি।’

চক্রের হোতা মোনায়েম হোসেন জেমস তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলে জানা গেছে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি ঢাকায় নিয়মিত হাসপাতালে যাই এলাকার রোগীদের দেখাশোনা করতে। তবে কিডনি বিক্রির সাথে জড়িত নই।’

তার ব্যাংক হিসাবে প্রচুর টাকার লেনদেনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মোনায়েম হোসেন জেমস। 

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘কিডনি পাচার সিন্ডিকেটের সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’