অনলাইন ডেস্ক:-
দীর্ঘ ৪১ বছরের কারাবাস শেষে অবশেষে মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনপন্থি লেবাননি নাগরিক জর্জেস ইব্রাহিম আবদাল্লাহ। ৭৪ বছর বয়সী এই বামপন্থি নেতা গত শুক্রবার ভোরে ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের একটি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সরাসরি নিজ দেশ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে পৌঁছান।
আবদাল্লাহকে ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সে এক মার্কিন ও এক ইসরায়েলি কূটনীতিককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন লেবাননের একটি বামপন্থি সশস্ত্র সংগঠন আর্মড রেভল্যুশনারি ফ্র্যাকশনস (এলএআরএফ)-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। সংগঠনটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ চালাত।
১৯৭৮ ও ১৯৮২ সালে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে ফিলিস্তিনি ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পর এলএআরএফ ইউরোপে মার্কিন ও ইসরায়েলি স্বার্থে হামলা চালাতে থাকে। ১৯৮২ সালে স্ট্রাসবুর্গে মার্কিন কূটনীতিক চার্লস রে এবং প্যারিসে ইসরায়েলি কূটনীতিক ইয়াকভ বারসিমানতোভকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৪ সালে আবদাল্লাহ নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
১৯৯৯ সাল থেকেই মুক্তির জন্য আবেদন করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু প্রতিবারই তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তার সমর্থকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চাপেই ফ্রান্স সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। ফ্রান্সের তিনটি বামপন্থি পৌরসভা তাকে ‘সম্মানসূচক নাগরিক’ ঘোষণা করে এবং প্রতিবছর একবার করে তার মুক্তির দাবিতে কারাগারের সামনে বিক্ষোভ হয়।
এক সাক্ষাৎকারে আবদাল্লাহ বলেন, ‘ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি দায়বদ্ধতা আমাকে মানসিকভাবে টিকিয়ে রেখেছে। যদি এই চেতনা না থাকত, তবে দীর্ঘ কারাবাসে আমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতাম।’
সাদা দাড়ি, অটল দৃষ্টি এবং অবিচল মনোভাব নিয়ে তিনি আজও ফরাসি বামপন্থি আন্দোলনের প্রতীক হয়ে আছেন।
১৯৫১ সালে উত্তর লেবাননের একটি খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জর্জেস ইব্রাহিম আবদাল্লাহ। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিকে তিনি যুক্ত হন মার্কসবাদী রাজনীতির সঙ্গে এবং ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা নেন।
ফ্রান্সে দীর্ঘ ৪১ বছরের কারাভোগ শেষে আজ তিনি ফিরে এসেছেন নিজভূমে, ফিরে পেয়েছেন স্বাধীনতা—কিন্তু এখনও তার চেতনায় আগুন জ্বলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার স্বপ্নে।
সূত্র: বিবিসি