অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৭৫ প্রাণ

প্রকাশকালঃ ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:২৪ অপরাহ্ণ ০ বার পঠিত
অক্টোবরে সড়কে ঝরেছে ৪৭৫ প্রাণ

ঢাকা প্রেস নিউজ
 

একটি সড়ক দুর্ঘটনা কখনোই শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনা নয়, তা হয়ে ওঠে একটি দীর্ঘস্থায়ী বেদনার গল্প। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সারা দেশে ৪৫২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৮১৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
 

গত ২৩ নভেম্বর সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
 

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি রেলপথে ৬৩টি দুর্ঘটনায় ৭৬ জন নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৯টি দুর্ঘটনায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ৩৬ জন আহত হয়েছেন এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
 

সব মিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় ৫৭৫ জন নিহত এবং ৮৭৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৩ জন নিহত এবং ২৩৯ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩০.৫৩ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৩১ শতাংশ ও আহতের ২৯.৩২ শতাংশ।
 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৪৯ জন চালক, ১৩৭ জন পথচারী, ৫১ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭৩ জন শিক্ষার্থী, ১৮ জন শিক্ষক, ৭৬ জন নারী, ৬২ জন শিশু, ৫ জন চিকিৎসক, ৯ জন সাংবাদিক এবং ১৩ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৬ জন পুলিশ সদস্য, ৩ সেনা সদস্য, ১ আনসার সদস্য, ১২৪ জন চালক, ১১৭ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৫১ জন শিশু, ৪৯ জন শিক্ষার্থী, ৩২ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৫ জন শিক্ষক, ৪ জন চিকিৎসক, ৬ জন সাংবাদিক এবং ১৬ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন।
 

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৬৩১টি যানবাহন involucr করা ছিল, যার মধ্যে ২৪.৪১% ছিল মোটরসাইকেল, ২২.৫০% ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৮.৫৪% বাস, ১৭.৯১% ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৩.৯৬% সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৬.৬৫% নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৬.০২% ছিল কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
 

দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে প্রতিবেদনটি উল্লেখ করেছে, ৪৯.৪৮% দুর্ঘটনা ঘটেছে গাড়ি চাপা দেওয়ার কারণে, ২৫.২৫% দুর্ঘটনা হয়েছে মুখোমুখি সংঘর্ষে, ১৪.৭৭% দুর্ঘটনা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ফলে, ৯.৫১% দুর্ঘটনা বিভিন্ন কারণে এবং ০.২৫% ট্রেন-যানবাহনে সংঘর্ষে। এছাড়া, ০.৭৫% দুর্ঘটনা চাকায় ওড়না পেঁচানোর কারণে ঘটেছে।
 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতি, সড়কে রোড সাইন বা মার্কিং না থাকা, অতি বৃষ্টির কারণে গর্তের সৃষ্টি হওয়া, সড়কে টার্নিং চিহ্নের অভাব, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি এবং চালকদের অদক্ষতা ও আইন ভঙ্গের প্রবণতা এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
 

এছাড়া, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা, সড়কের আলোকসজ্জা বৃদ্ধি, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, সড়ক নিরাপত্তা বিধানে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ, এবং গুণগতমানের সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের ব্যবস্থা।
 

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে দুর্ঘটনার খবর সংগ্রহ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।