প্রকাশকালঃ
২৮ মার্চ ২০২৩ ০১:৫৪ অপরাহ্ণ ৪৩০ বার পঠিত
নিকট-অতীতে মুসলিম বিশ্বের যেসব নারী কোরআনের সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, শায়খা তানাজুর মুহাম্মদ মোস্তফা নাজুলি (রহ.) তাদের একজন। তিনি মিসরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী হাফেজ ও কারি। প্রায় ৭০ বছর তিনি কোরআনের পাঠদান করেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী তার কাছ থেকে কোরআনের পাঠ গ্রহণ করে। তিনি পবিত্র কোরআনের ১০ কেরাতে (কোরআন পাঠের পদ্ধতি) তিনি পারদর্শী ছিলেন। মিসরের গারবিয়া প্রদেশের জন্য শায়খা তানাজুর (রহ.) ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ কোরআনের শিক্ষিকা। তিনি তিনজন শিক্ষকের কাছে শাতেবি পদ্ধতিতে কোরআনের সাত কেরাতের পাঠগ্রহণ করেন এবং দীর্ঘকাল কোরআনের পাঠদান করেন। তার কাছ থেকে বহু ইমাম, আলেম, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক ও প্রকৌশলী তথা সর্বশ্রেণির মানুষ কোরআন শেখেন।
শায়খা তানাজুর (রহ.) ১৯২৪ সালে মিসরের গারবিয়া প্রদেশের নাসিরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই দুর্ঘটনাক্রমে লাঠির আঘাতে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান। তবে দৃষ্টিহীনতা তার জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারেনি, বরং আল্লাহ তাকে চোখের আলোর প্রতিদানে কোরআনের আলো দান করেছেন। কোরআনের আলোয় তার অন্তরকে আলোকিত করেছেন।
শায়খা তানাজুর নিজের সম্পর্কে বলেন, আমি শায়খ আবদুল লতিফ আবু সালিহের কাছে কোরআনের হিফজ শুরু করি। তবে তা ছিল তাজবিদ ছাড়া। এরপর আমি শায়খ মুহাম্মদ আবু হালাওয়ার কাছে তাজবিদ শিখি। তার কাছেই সুরা ইউনুস পর্যন্ত সাত কেরাতের পাঠগ্রহণ করি। তার কাছে আমার শিক্ষাকাল ছিল ১৫ বছর। অতঃপর আমি শায়খ আবদুল জাওয়াদের কাছে শাতেবি পদ্ধতিতে সাত কেরাত শিখি। তিনি আমাকে সুরা ফাতিহা থেকে সুরা তাওবা পর্যন্ত শেখান।
শায়খা তানাজুর (রহ.) ছিলেন অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী একজন নারী। কোরআন ছিল যার জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। কোরআনের প্রতিটি শব্দ-বাক্য ছিল তার নখদর্পণে। সম্মানিতা এই নারী তার ঘরকে কোরআনপ্রেমীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। ফলে তা কোরআনের পাঠশালায় পরিণত হয়েছিল। কোরআনপ্রেমীদের ভিড়ই ছিল তার জীর্ণশীর্ণ ঘরের সৌন্দর্য।
শায়খা তানাজুর (রহ.) ৯ জানুয়ারি ২০২১ সালে ইন্তেকাল করেন। তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। মিসরের বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ শাহাভি তার ছেলে। শায়খা তানাজুর (রহ.) ইন্তেকাল করার পর শায়খুল আজহার ড. আহমদ তাইয়িব এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘মুসলিম জাতি একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হারাল। আল্লাহ তার দৃষ্টিকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করেছিলেন। তিনি কোরআনের জ্ঞান বিস্তারে সর্বোত্তম চেষ্টা করেছেন এবং উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি শায়খা তানাজুর নাজুলি। বয়সে তিনি প্রবীণত কারিয়া ও কোরআনের হাফেজা। হে আল্লাহ, কোরআনকে আপনি তার জন্য সুপারিশকারী করুন। হে পরম করুণাময়, তাকে আপনি আপনার রহমত ও ক্ষমার চাদরে আবৃত করুন।’