কুড়িগ্রামের শুক্কুর আলীর সঙ্গী বেজি, নাম রুপালি

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৫:৩২ অপরাহ্ণ   |   ৩১ বার পঠিত
কুড়িগ্রামের শুক্কুর আলীর সঙ্গী বেজি, নাম রুপালি

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

শুধু মানুষ নয়, বন্ধুত্ব হতে পারে অন্য প্রাণীর সঙ্গেও। সুখ কিংবা দুঃখও যেন তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায়। পোষা প্রাণীটির সঙ্গে আনমনে কথাও বলেন  অনেকে। পাশ্চাত্যে তো বটেই, আমাদের দেশেও অনেকে প্রাণী পোষেণ বাড়িতে।

 


 

বাড়িতে কুকুর, বিড়ালের পাশাপাশি বিভিন্ন পাখি এমনকি বেজির মতো প্রাণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। ওদের যতœ নেওয়া, খাওয়া দাওয়া করোনো, সময় দেওয়া এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখার কাজগুলো করতে হয় পরিবারের সবাইকে মিলে। সভ্যতার অগ্রগতিতে যখন বন্যপ্রাণীদের অস্তিত্ব সংকট চলছে, তখন বেজির মতো প্রাণীর সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা।
 

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভার রাজারাম ক্ষেত্রী গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শুকুর আলী। ছোটবেলা থেকেই পশু-পাখির প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। বনের পাখি হোক কিংবা আহত কোনো প্রাণী, তিনি স্নেহ আর যতেœ তাদের সেবা করেন। আহত পশুদের নিজ খরচে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে আবার তাদের বনে ছেড়ে দেন।  প্রাণীদের প্রতি এই ভালোবাসা আজ তার নেশায় পরিণত হয়েছে।
 

বর্তমানে শুকুর আলীর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু একটি বেজি।  এক বছর আগে তার ছেলে দুলাল মিয়া জঙ্গল থেকে শখ করে একটি বেজির ছানা ধরে আনে বাড়িতে।  ছেলের কাছে শুকুর আলী বেজির ছানাটিকে খাঁচায় রেখে আদরে বড় করতে থাকেন।  নাম রাখেন ‘রূপালী’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপালী হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। বাড়ির সকলে তাকে খাওয়া দেয়। সময়  মতো।  নানা রকম যত্নও করে। 
 

উলিপুর-রাজারহাট সড়কের নারিকেলবাড়ি সন্ন্যাসীতলায় শুকুর আলীর ছোট্ট একটি চা-বিস্কুটের দোকান আছে।  শুকুর আলী বেজিটিকে সন্তানের মতো ভালোবাসেন। বেজিটিও তাকে ছাড়া থাকতে পারে না। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে রূপালীকে সঙ্গে নিয়ে দোকানে আসেন। সেখানে খোলা জায়গায় তাকে ছেড়ে দেন। কখনো পাশের ঝোপঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়, কখনো বা দোকানের কোনে লুকিয়ে থাকে।  ডাক দিলে দৌড়ে এসে শুকুর আলীর কোলে উঠে পড়ে।  খেতে পায় দুধ, কলা, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবার।
 

শুকুর আলীর সঙ্গে বেজির বন্ধুত্বের কথা শুনে বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দোকানে আসে বেজি আর মানুষের বন্ধুত্ব দেখার জন্য। এর মধ্যে কেউ কেউ বিস্কুট, কলা, সমুচাসহ বিভিন্ন খাবার খেতে দেয়। বেজিটিও খায়, কারও কোনো ক্ষতি করে না। শুধু শুকুর আলী নয়, তার স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সব সদস্যই রূপালীকে সেন্হ করে। স্ত্রী দুলালী বেগম জানান, “আমরা গরিব মানুষ, নিজেরা না খেয়ে হলেও রুপালীর খাওয়ার ব্যবস্থা করি।  সপ্তাহে স্যাম্পু দিয়ে গোছল করিয়ে দেই।
 

গ্রামবাসী আব্দুল জলিল মিয়া, আশাদুল ইসলাম জানায়, শুকুর আলী একজন প্রকৃত পশু-পাখি প্রেমিক মানুষ।  তারা বলেন, “শুধু বেজি নয়, এক সময় শুকুর আলী জঙ্গলের ইঁদুরও পালতেন।  এখন প্রতিদিন তার বাড়ি এবং দোকানে মুক্ত পাখিদের হাতে খাবার খাইয়ে দেন।  পাখিরাও তার কাছে এসে খাবারের জন্য চেঁচামেঁচি করে।
 

শুকুর আলী জানান, “মানুষ এখন মানুষের কথা শোনে না। অথচ বনের পশু আমার ডাকে সাড়া দেয়। রূপালী আমার ঘরের পোকামাকড়ও খেয়ে ফেলে। ওকে নিয়ে আমি স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করি। বন্ধু মনে হয়।” শুকুর আলীর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শুধু রুপালীর জন্যই নয়, প্রকৃতি ও প্রাণিকুলের প্রতি তার এক গভীর মমত্ববোধেরই বহির্প্রকাশ।
 

মানুষ এবং প্রাণীর মধ্যে বন্ধুত্ব একটি গভীর এবং পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক, যা উভয় প্রজাতির জন্য মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এটি কেবল মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যেও আন্তঃপ্রজাতি বন্ধুত্ব দেখা যায়।