আকাশি-সাদা জার্সিতে শেষ ম্যাচ বলে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের আগে মাঠে বল নিয়ে আসেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার দুই মেয়ে পিয়া ও মিয়া। বিদায়ী ম্যাচে সুন্দর আয়োজনের পর ফ্লোরিডার হার্ডরক স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় ডি মারিয়ার পায়ে দেখা মেলে শৈল্পিক ফুটবলের। চোট নিয়ে লিওনেল মেসি মাঠ ছাড়ার পর লম্বা সময় অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ছিল তাঁর বাহুতে। দলের সেরা তারকার অভাব এতটুকু বুঝতে না দেওয়া ডি মারিয়া খেলেছিলেন ২৫ বছরের প্রাণবন্ত এক যুবকের মতো।
বদলি লাওতারো মার্টিনেজের গোলের পর কোচ লিওনেল স্কালোনি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। তাই তো ম্যাচের ১১৭ মিনিটে ফুটবলের সেনানী ডি মারিয়াকে তুলে নেন তিনি। জীবনের শেষবারের মতো আর্জেন্টিনার হয়ে মাঠ ছাড়ার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ৩৬ বছর বয়সী এই তারকা। তাঁর কান্নার দৃশ্য বারবার টিভি ক্যামেরার সামনে ফুটে ওঠে। কলম্বিয়াকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকার রেকর্ড জয়েও ছাপ রেখে গেছেন তিনি।
সোমবার অনুষ্ঠিত ফাইনালে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছেন। দেশের জার্সিতে ১৬ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ারের সমাপ্তিটা এর চেয়ে মধুর আর কী-ই হতে পারে। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণজয়সহ জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি ট্রফি জিতেছেন ডি মারিয়া।
আর্জেন্টিনার রোজারিওতে বেড়ে ওঠা। ইয়ুথ ক্যারিয়ারে সাফল্যের রঙে ভেসে ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনার জার্সিতে পথচলা শুরু ডি মারিয়ার। আলবিসেলেস্তেদের হয়ে ১৪৫ ম্যাচে ৩১ গোল করা এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের শেষটা হয়েছে ২০২৪ সালে। মাঝের এই সময়ে ক্লাব এবং জাতীয় দলে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তবে গত চার বছরে দেশের জার্সিতে যা কিছু করেছেন, তা এককথায় অবিশ্বাস্য।
২০২১ সালে মারাকানায় কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে জয়সূচক গোল, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল, একই বছরে ফিনালিসিমায় ইতালির বিপক্ষে গোল; আর্জেন্টিনার ট্রফি জয় আর ডি মারিয়ার গোল যেন একই বিন্দুতে মিলে গেছে। আন্তর্জাতিক আসরের শেষ ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে গোল করতে পারেননি, তবে শিরোপা জিতে বিদায় নেওয়াটা ডি মারিয়ার কাছে স্বপ্ন পূরণের মতোই, ‘এটি (ভাগ্যে) লেখা ছিল। ঠিক এমনই। আমি এটিরই স্বপ্ন দেখেছি। এভাবেই অবসর নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আমার এখন অনেক সুন্দর অনুভূতি আছে। আমি এই প্রজন্মের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, যারা এসব অর্জন সম্ভব করেছে, যেগুলো আমি খুব করে চেয়েছিলাম।’
রঙিন সমাপ্তির আগে মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখেছিলেন ডি মারিয়া। চোটের কারণে খেলতে পারেননি ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। ২০১৫ ও ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে পরাজয়ের দুঃখ। দুটিতেই সঙ্গী ছিলেন তিনি। তাই বিদায় বেলায় দুঃসময়ের সেই স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনার সঙ্গে এমন বিদায়টা প্রাপ্য ছিল বলে জানিয়েছেন ডি মারিয়া, ‘এমনভাবে শেষ করার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে? ফাইনালে ওঠা এবং সেগুলো জেতা সহজ নয়। আমি জানি, কারণ মুদ্রার উল্টো পিঠের জীবনটাও আমি দেখেছি। এখন এটি হচ্ছে। কোনো এক পর্যায়ে এটি হওয়ারই ছিল।’