ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালা বাস্তবায়ন না করে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে তৎপর বিআইএ
প্রকাশকালঃ
২২ জুলাই ২০২৩ ০১:৫৯ অপরাহ্ণ ১৭৩ বার পঠিত
বহুল প্রতীক্ষিত ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালা’ যাতে বাস্তবায়ন না হয়, এ জন্য প্রজ্ঞাপন জারির কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর কাছে গতকাল বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নীতিমালা অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানোর দুই দিনের মাথায় বিআইএ এই চিঠি পাঠাল। বিআইএর সভাপতি শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘বিআইএ মনে করে ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালার কিছু ক্ষেত্রে সংশোধন আনা দরকার।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আপনার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের বিষয়টি স্মরণযোগ্য। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের সঙ্গেও এ বিষয়ে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে।’
এদিকে গতকাল দেশের সব বিমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশেও চিঠি পাঠান শেখ কবির হোসেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালা অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে যে পাঠানো হয়েছে, তা বিআইএর নজরে এসেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং আইডিআরএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে আলাপ হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির কাজটি সাময়িকভাবে স্থগিত করার অনুরোধ জানালে তাঁরা এতে সম্মতি দিয়েছেন।
সূত্রগুলো জানায়, নীতিমালা প্রণয়ন করেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার আশঙ্কায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এখন চুপচাপ আছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ কথা বলবেন না বলে প্রথম আলোকে জানান তাঁর একান্ত সচিব (পিএস) শিহাব উদ্দিন আহমেদ।
ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালার পাশাপাশি ‘করপোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স) নির্দেশিকা’ও গত মঙ্গলবার অনুমোদন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিষয়ে অবশ্য বিআইএ কিছুই বলেনি।
তবে বিআইএ বিরোধিতা করলেও প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যদি চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করে দেব।’
অনুমোদিত নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যাংকাস্যুরেন্স বাস্তবায়িত হবে মূলত দেশের ব্যাংকগুলোর শাখার মাধ্যমে। আরেক অর্থে বলতে গেলে বিমা কোম্পানির করপোরেট এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে ব্যাংক। বিমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থা তুলনামূলক কম থাকায় ব্যাংকাস্যুরেন্স হতে পারে মানুষের ভরসার জায়গা। এ জন্য গ্রাহকদের বিমা কোম্পানিতে যেতে হবে না, ব্যাংকের শাখায় গেলেই চলবে। অর্থাৎ ব্যাংক তার নিজের গ্রাহকের কাছে ব্যাংকিং পণ্যের পাশাপাশি বিমাপণ্যও বিক্রি করবে। পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেনশন, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনা, দেনমোহর, শিক্ষা, ওমরাহ হজ ইত্যাদি।
নীতিমালা ও নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোই ব্যাংকাস্যুরেন্সের এজেন্ট হতে পারবে। সে জন্য বিমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করতে হবে তাদের। তবে কোনো ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট তিনটির বেশি বিমা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। এ জন্য বিমা কোম্পানিকে আইডিআরএ এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
এ বিষয়ে আইডিআরএর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী গতকাল বলেন, ‘বিষয়টির বাস্তবায়ন পর্যায়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। সে কারণে আমরা একটু ধীরগতিতে যাচ্ছি।’