বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এখনো বাল্যবিবাহের শিকার ৯% কিশোর

প্রকাশকালঃ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ ৫৪৬ বার পঠিত
বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এখনো বাল্যবিবাহের শিকার ৯% কিশোর

দেশের নারীদের মধ্যে বড় একটি অংশ কন্যাশিশু। দেশের প্রায় ২৮ শতাংশ কন্যাশিশু রয়েছে, যাদের বয়স শূন্য থেকে ১৪ বছর। দেশে উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে বাল্যবিবাহ। ১৫ বছরের আগেই দেশের প্রায় ৮.২ শতাংশ কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। যেখানে এই হার গ্রামে ৮.৮ শতাংশ, শহরে ৬.৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

 

বিশ্বব্যাপী শিশুদের নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য বলছে, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। বাল্যবিবাহ এবং অল্প বয়সে গর্ভধারণ মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য গুরুতর সমস্যা এবং এটি তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে আজীবন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


যেসব মেয়ের বাল্যকালে বিয়ে হয়, তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। তারা অপুষ্টিতে ভোগে, গর্ভাবস্থায় ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে অনেকেই অকালে মারা যায়। পরিণত বয়সে বিয়ে করা মেয়েদের তুলনায় বাড়িতেও তাদের বেশি সহিংসতার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশু প্রতিনিয়ত সহিংসতা, ভর্ত্সনা এবং শোষণের শিকার হয়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই শারীরিক শাস্তি বা মানসিক আগ্রাসনের শিকার, সেখানে নারী শিশুরা রয়েছে। ফলে সব ক্ষেত্রে কন্যাশিশুদের সুরক্ষায় অরো বেশি সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

 

জানা গেছে, প্রতিবছর ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশের সমাজে যাতে নারীরা ভেদাভেদ বা বৈষম্যের শিকার না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সাল থেকে কন্যাশিশু দিবস পালনের আদেশ জারি করে। যদিও জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের ১১ অক্টোবর পালিত হয় আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস।


এ ছাড়া প্রতিবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শিশু সপ্তাহ। এই শিশু সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কন্যাশিশু দিবস হিসেবে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে গতকাল ‘বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৪’ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কন্যাশিশুর স্বপ্নে গড়ি আগামীর বাংলাদেশ’।

 

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের  উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই, যে দেশ হবে শিশুবান্ধব। এমন সমাজ চাই, যে সমাজ হবে শিশুর মুক্ত চিন্তার উত্কৃষ্টতম স্থান। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় শিশুদের জন্য থাকবে খেলাধুলার স্থান, বেড়ে ওঠার নির্মল পরিবেশ। আমরা চাই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় থাকবে শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ। বিজ্ঞানভিত্তিক মুক্ত চিন্তার সমাজ চাই।

 

আমাদের বর্তমান সভ্যতা আসলে বিজ্ঞানভিত্তিক সভ্যতা। যে সভ্যতায় উদ্ভাবিত সব প্রযুক্তি এই বৈজ্ঞানিক নিয়ম-কানুনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই শিশুরাই এনে দিয়েছে নতুন এক বাংলাদেশ। তাদের এক নতুন নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া, একটি সুন্দর নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আজকের শিশু আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক, দেশ সংস্কারক ও উদ্যোক্তা। এ জন্য শিশুদের আনন্দ দিতে হবে। আনন্দের মধ্য দিয়ে নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ, শিষ্টাচার ও পড়াশোনা শেখাতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীল  কাজ শেখাতে হবে। এতে তার চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি পাবে।’