বাংলাদেশের যোগাযোগ বাবস্থায় আরেক ধাপ অগ্রগতি

প্রকাশকালঃ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৩:০৪ অপরাহ্ণ ১৭৬ বার পঠিত
বাংলাদেশের  যোগাযোগ বাবস্থায় আরেক ধাপ অগ্রগতি

একটি দেশের সমৃদ্ধি তথা উন্নতির প্রধান শর্ত সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ পেরিয়ে বাংলাদেশ সেই কাঙ্ক্ষিত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের ভিত্তিপ্রস্তর ঘটেছে। মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, একযোগে ১৪০ সেতু আর বঙ্গবন্ধু টানেল। মেগা এই প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বেশির ভাগ মেগা প্রকল্প ২০২৩ সালেই বাস্তবায়িত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ও পদ্মা রেল-সংযোগসহ বর্তমান সরকারের বেশির ভাগ মেগা প্রকল্প চলতি বছরেই শেষ এবং চালু হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে রাজধানীতে দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু হয় মেট্রোরেল। এর ফলে বদলে গেছে দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ। এছাড়া সারা  দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চলতি বছর একসঙ্গে ১৪০ সেতু চালু করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দুই ঘণ্টার পথ এখন মাত্র ৩০ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিলে আসা যাচ্ছে মেট্রোরেল সার্ভিসে। অন্যদিকে গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া গত ২৮ অক্টোবর চালু করা হয় আরেক মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশের টানেল।

গত ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। এই রেলপথের ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে হাতি চলাচলের বিশেষ পথ। এর আগেই গত ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে মাওয়ার পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালু করা হয় পদ্মা রেল-সংযোগ প্রকল্পের একটি অংশ। পাশাপাশি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে গত ৪ নভেম্বর, যা শেষ হবে ২০৩০ সালে। রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে। গত ১৪ নভেম্বর এটিও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়কে বাস চলাচলের পৃথক লেন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)-র কাজও শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের সড়ক ও রেলপথের চিত্র বদলে গেছে; যা বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় মাইলফলক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

উন্নয়নের নতুন স্বপ্নসারথি : ঢাকায় চালু হয়েছে মেট্রোরেল। যানজটের শহরে যা নগরবাসীর জীবনে স্বস্তির বাতাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের মাধ্যমে জাতিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি সফলভাবে পালন করলেন। নগরবাসীর জন্য এই অত্যাধুনিক গণপরিবহনের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি যেমনটি বলছিলেন, ‘গণপরিবহনে মেট্রোরেল একটি যুগান্তকারী সংযোজন। আমরা ভীষণ খুুশি যে বর্তমান সরকার আমাদের ওপর যে আস্থা রেখেছিলেন, আমরা সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছি।’

১৪০ সেতুর উদ্বোধন : ইতিমধ্যে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, পায়রাসেতু, বেহুদিয়া সেতু, কালনা সেতু, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু উদ্বোধন শেষ হয়েছে; যা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গত অর্থবছর দেশে ১০০টি সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। আর ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর ১৪০টি সেতু উদ্বোধন করা হয়। দেশের বিভিন্ন বিভাগে অবস্থিত এই গত বছরের ১০০টি সেতু আর চলতি বছরে ১৪০টি একসঙ্গে উদ্বোধন দেশের যোগাযোগ ক্ষেত্রের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। সারা দেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ আরো সহজ করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি অর্থায়নে ছোট ও মাঝারি ধরনের এই গত বছর ১০০টি সেতু আর চলতি বছরে ১৪০ নির্মাণ করা হয়।

বঙ্গবন্ধু টানেল : সরকারের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট বঙ্গবন্ধু টানেল; যা গাড়ি চলাচলের জন্য চলতি বছরের ২২ অক্টোবর খুলে দেওয়া হয়।  দক্ষিণ  টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদ্যাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু নৌ-চ্যানেল দিয়ে সড়ক পথের যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বাইসাইকেল, থ্রি-হুইলার চলবে না। আপাতত মোটরসাইকেলও চলবে না। একটি থাইল্যান্ড-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড ৫১ শতাংশ, চীন-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ অংশীদারিত্বে নির্মাণ হচ্ছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-ভিত্তিক প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও- কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার, র্যাম্পসহ দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। এতে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে সময় লাগছে ১০ মিনিট।