প্রকাশকালঃ
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:১৩ অপরাহ্ণ ৩০৫ বার পঠিত
দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফলের দামই এখন বাড়তি। এক মাসের ব্যবধানে ধরনভেদে বিদেশি ফলের কেজিতে দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত। ডাবের দাম নিয়ে হইচই একটু কমেছে। কিন্তু বাজারে ডাবের দাম এখনো সেভাবে কমেনি। তবে শুধু ডাব নয়, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীরা যেসব ফল বেশি খান, সেগুলোর দামও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গত এক মাসে মাল্টার দাম কেজিতে ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে। এ ছাড়া কমলা, আপেল, আঙুর, আনার,পেঁপেসহ অন্যান্য বিদেশি ফলের দামও বাড়তি।
ডলার-সংকটের কারণে এমনিতে বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। এ কারণে ফল আমদানি কমে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছেন না আমদানিকারকেরা। তাতে বিদেশি ফল আমদানি কমে গেছে। আর এ সুযোগে দেশি ফলের দামও বাড়তি। বাড়তি এ ফলের দামে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে ডেঙ্গু।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের ফলের দাম বেড়ে গেছে। আমদানি করা ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মাল্টার। বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩২০ থেকে ৩৭০ টাকায়। কোথাও কোথাও আরও একটু বেশি। এক মাস আগেও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মাল্টার দাম ছিল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। সেই হিসাবে, এক মাসে মাল্টার দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গুর কারণে এক মাস ধরে বাজারে মাল্টার চাহিদা বেড়েছে। তাতে দামও বেড়েছে লাফিয়ে।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকায়। কমলার দামও এক মাসে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। আর মানভেদে প্রতি কেজি লাল আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। সবুজ আপেলের দাম কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা। লাল আপেলের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বাড়লেও সবুজ আপেলের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। আঙুরের দামও আকাশছোঁয়া। কেজি প্রতি লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এক মাস আগে এ আঙুরের দাম ৪০০ টাকার আশপাশে ছিল। সাদা আঙুরের দামও বাড়তি, কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। নাশপাতি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি কেজি আনারের দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। আনারের দাম এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আমদানিকারকেরা বলছেন, ডলার-সংকটের কারণে এমনিতেই ফলের আমদানি কমেছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে মাল্টা, কমলা, আঙুরসহ বিভিন্ন ফলের চাহিদা। তাতেই হঠাৎ করে দামও বেড়ে গেছে। গত বছর ফল আমদানির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকগুলো ফল আমদানির ঋণপত্র খোলা সীমিত করে দেয়। আবার যেটুকু আমদানি হচ্ছে, ডলারের বাড়তি দামের কারণে সেগুলোর আমদানি খরচও বেশি।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুল করিম বলেন, দেশে মাল্টার ফলন ভালো হওয়ায় আমদানিকারকেরা কম আমদানি করেছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর কারণে বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেড়েছে।
ডেঙ্গুর কারণে সবচেয়ে বেশি চাহিদা তৈরি হয়েছে ডাবের। এটি আমদানি হয় না। আবার এটির সঙ্গে উৎপাদন খরচেরও কোনো বিষয় নেই। শুধু ডেঙ্গুর কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডাবের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ভালো মানের একটি ডাব রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। ১০০ টাকার কমে যেসব ডাব বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো আকারে ছোট। মানও ভালো নয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় হাসপাতাল বেশি, সেখানে ডাবের দামও বেশি।
এদিকে আমদানি করা মাল্টার দাম সবচেয়ে বেশি বাড়লেও সবুজ রঙের দেশি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে। বাজারে দেশি মাল্টার সরবরাহ বেশি থাকলেও এটির বিক্রি তুলনামূলক কম। তাই এ ফলের দাম কম হলেও চাহিদা কম। এ ছাড়া দেশি ও আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। আকারভেদে একেকটি জাম্বুরার দামও ৩০ থেকে ১৫০ টাকা। এসব ফলের দামও ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
মালিবাগ বাজারের ফল বিক্রেতা মহিনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এবার সব ফলের দামই বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে গত এক মাসে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায়।
বিদেশি ফলের আমদানি কমেছে
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ফলের আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কমে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন ফল। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। সেই হিসাবে, এক বছরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫২ টন ফল আমদানি কম হয়েছে।
আমদানি করা ফলের মধ্যে শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি কমেছে আপেল ও আঙুর। সর্বশেষ গত অর্থবছরে এই দুই ধরনের ফল আমদানি আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ করে কমে গেছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বিদেশি ফলের চাহিদা বেশি থাকে। কারণ, এ সময় দেশীয় ফলের সরবরাহ কম থাকে।