ঢাকা প্রেস নিউজ
জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য মাতসুশিমা সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ এনে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল থানায় তিনি এই জিডি করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মিডিয়া ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ নওমী।
সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে নারী ফুটবলারদের বিরোধ নিয়ে ফুটবল অঙ্গনে আলোচনা চলছে। কোচের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে সুমাইয়াসহ ১৮ জন সিনিয়র ফুটবলার বিদ্রোহ করেছেন। বিষয়টি তদন্তে বাফুফে একটি কমিটি গঠন করেছে এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সুমাইয়া।
জাপান প্রবাসী সুমাইয়া তার ওই পোস্টে দাবি করেন, গেল কয়েকদিনে তিনি বহুবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন। পোস্টে তিনি আক্ষেপ করে লেখেন, কেন তিনি একজন ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন? একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে যেভাবে দেশকে পাশে পাওয়া উচিত ছিল, বাস্তবে তা পাননি।
সুমাইয়া ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “আমি সুমাইয়া, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের একজন সদস্য। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শিক্ষার্থী হয়েও আমি স্কুল টুর্নামেন্ট থেকে ফুটবল শুরু করি এবং ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের অংশ ছিলাম। ফুটবল আমার জন্য এক তিক্ত-মধুর যাত্রা।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি তরুণদের ফুটবলে আগ্রহী করতে খেলাধুলায় যুক্ত হয়েছিলাম। যেসব বাবা-মা শুধু পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বলেন, তাদের দেখাতে চেয়েছিলাম যে, সংকল্প থাকলে সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। কিন্তু আজ আমি আক্ষেপ নিয়ে বসে আছি— আমার পড়াশোনা, পরিবার ও ঈদের আনন্দ ত্যাগ করে দেশের জন্য খেলেছি, অথচ আমাদের ত্যাগের স্বীকৃতি মেলেনি।”
সুমাইয়া, যিনি একজন জাপানিজ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশি নারী ফুটবলার, বিশ্বাস করেছিলেন যে ফুটবল খেললে দেশ তার পাশে থাকবে। তিনি লেখেন, “ফুটবল খেলতে আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে লড়াই করেছি। ভাবতাম, বিপদে দেশ পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। কেউ অ্যাথলেটদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবে না। আমি ও আমার সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখে দেওয়ার মতো সামান্য যোগ্যতা আমার আছে বলেই, গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পাচ্ছি। এমন সব কথা বলা হচ্ছে, যা কল্পনাতেও আনতে পারি না।”
একজন ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন অনুসরণের কারণে এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া উচিত নয় বলেও তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, “আমি জানি না, এই মানসিক ট্রমা কাটিয়ে উঠতে আরও কতদিন লাগবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটার জন্য কারও এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।”
নারী ফুটবলারদের একটি অংশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে বডি শেমিং ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন। বেশ কিছু নারী ফুটবলার এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। জানা গেছে, ওই অভিযোগ ইংরেজিতে লিখে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়ালকে জমা দেওয়া হয়, এবং সেই চিঠি ইংরেজিতে লেখার দায়িত্ব পালন করেন সুমাইয়া। এরপর থেকেই তিনি হুমকি পাচ্ছেন।