ইসলাম বর-কনের মধ্যে উপহারের আদান-প্রদান প্রসঙ্গে যা বলে
প্রকাশকালঃ
১৩ জুলাই ২০২৪ ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ ৫৩১ বার পঠিত
বর্তমান সমাজের অতি পরিচিত ও বহুল আলোচিত একটি শব্দের নাম যৌতুক। বিবাহের সব আলোচনার সঙ্গে সমাজের একটি বড় অংশে আলোচনা হয় যৌতুক নামের এই ‘দেনা-পাওনা’ নিয়ে। এই দেনা-পাওনার আলোচনা অনেক সময় হয় একেবারে বিয়ের শুরুতেই, বর-কনে পছন্দের আগে।
কখনো কখনো বর-কনে পছন্দের পর। বহু পরিবারে বিয়ের ক্ষেত্রে এটা প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ নিয়ে হয় বিস্তর দর-কষাকষি। দর যদি মনমতো হয় তাহলে থাকে না কালো আর সুন্দরের তফাত। যেন দেনা-পাওনাটাই বিয়ের প্রধান ও মুখ্য বিষয়, বর-কনের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি গৌণ। যৌতুক নামের এই আজব দেনা-পাওনার অক্টোপাসে আবদ্ধ আমাদের সমাজ। সুতরাং আমাদের জানা দরকার যৌতুক কাকে বলে। যৌতুকের পরিচয় ও স্বরূপ কী। যৌতুক শব্দটি বাংলা।
ইংরেজিতে Dowry দ্বারা বিবাহে যৌতুক বা স্ত্রীর সম্পদকে বোঝায়। শরিয়তে বিবাহের শর্ত হিসেবে কনে পক্ষের কাছ থেকে বরপক্ষ কর্তৃক দাবি করে কোনো ধরনের অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করাকে যৌতুক বলা হয়।
যৌতুকের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি শব্দের পরিচয় জানা দরকার, তা হলো ‘জাহিজ’ (স্বতঃস্ফূর্ত উপহার)। শরিয়তের পরিভাষায় ‘জাহিজ’ বলা হয় এক ধরনের উপহার-উপঢৌকনকে, যা মেয়ের বাবা সদিচ্ছায় বরপক্ষের দাবি ও কোনো শর্ত ছাড়া হাদিয়া হিসেবে দিয়ে থাকেন। এই উপঢৌকন অবৈধ নয়।
এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যখনই বরপক্ষ দাবি করে বসে বা কোনো শর্ত ছুড়ে দেয়, তখন আর সেটা জাহিজ বা উপঢৌকন থাকে না, যৌতুকে পরিণত হয়। আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানভি (রহ.) উল্লেখ করেন, জাহিজ হলো ওই সব উপহার-উপঢৌকন ও আসবাব, যা মেয়ের পিতা-মাতা মেয়েকে বিদায়ের সময় সদিচ্ছায়, খুশি মনে দিয়ে থাকেন। এটা মূলত পরস্পর মহব্বত-ভালোবাসা এবং দয়া ও আন্তরিকতার প্রমাণ। সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের নাম, যশ, খ্যাতি ও সম্মান অর্জন থেকে মুক্ত হতে হবে। এভাবে মেয়ের পিতা-মাতার ওপর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করাও যাবে না। (আপকে মাসায়েল আওর উনকে হল : ৬/২৪৬)
এর সঙ্গে সঙ্গে যৌতুক ও জাহিজের পার্থক্যটাও আমাদের কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার, তবেই আমরা বুঝতে পারব কোনটা যৌতুক আর কোনটা ‘জাহিজ’। নিচে যৌতুক ও জাহিজের মধ্যকার কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো—
১. যৌতুক ইসলাম ও শরিয়তে হারাম আর জাহিজ দেওয়া-নেওয়া বৈধ।
২. যৌতুক অমুসলিমদের প্রথা আর জাহিজ হলো উপহার-উপঢৌকন।
৩. যৌতুক এক প্রকার জুলুম আর জাহিজ হলো মহব্বত ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
৪. যৌতুক এক ধরনের ঘুষ আর জাহিজ স্বতঃস্ফূর্ত অনুদান।
৫. যৌতুক এক ধরনের ডাকাতি আর জাহিজ হলো এহসান ও অনুগ্রহ।
৬. যৌতুক বাধ্য করে নেওয়া হয় আর জাহিজ সদিচ্ছায় খুশি মনে দেওয়া হয়।
৭. যৌতুক শর্ত ও চুক্তি করে নেওয়া হয় আর জাহিজ শর্ত ও চুক্তিবিহীনই দেওয়া হয়।
৮. যৌতুক দাবি করে চাপ দিয়ে নেওয়া হয় আর জাহিজ কোনো ধরনের দাবি ও চাপ ছাড়াই দেওয়া হয়।
৯. যৌতুক না দিলে বরপক্ষের মন খারাপ হয়, জাহিজ না দিলে মনে কোনো কষ্ট বা আকাঙ্ক্ষা অনুভব হয় না।
১০. অনেক সময় যৌতুক প্রথা ও মৌসুম অনুযায়ী নির্ধারণ হয়, কিন্তু জাহিজ প্রথা বা মৌসুম অনুযায়ী হয় না।
আল্লাহ তাআলা এই সামাজিক ব্যাধি থেকে আমাদের হেফাজত করুন, আমিন।