শিয়াল থেকে কাছিম সবই পাচার হয়!!

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:১১ অপরাহ্ণ   |   ৭৫ বার পঠিত
শিয়াল থেকে কাছিম সবই পাচার হয়!!

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার-চট্টগ্রামঃ-

 

পাচার হচ্ছে নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। বিশেষ করে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বনাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ও পার্শ্ববর্তী দেশে এসব প্রাণী পাচার হচ্ছে। চলতি বছরের গত আট মাসে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট চার হাজার ৪৪টি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করা প্রাণীর মধ্যে রয়েছে সুন্ধি কাছিম, বানর, লাজ্জবতী বানর, উল্লুক, চিতা বিড়াল, অজগর, কাড়ি কাইট্টা, গন্ধগোকুল, মেছো বিড়াল, ভোঁদড়, মুখপোড়া হনুমান, ভাল্লুক, চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ, গুইসাপ, বন বিড়াল, মিঠা পানির কুমির, সজারু, কচ্ছপ, তক্ষক, শিয়াল, বেজি, লেমুর, সাপ, হনুমান ও বনরুই।ওয়ার্ল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসার কারণে অনেকটা বিপন্ন।


বাংলাদেশ কখনো চালানকৃত বন্যপ্রাণীর উৎপত্তিস্থল, কখনো বিভিন্নপ্রজাতির বন্যপ্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্য করার পরিবর্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাওয়া হচ্ছে। আবার কখনো বাংলাদেশকে বন্যপ্রাণীর চালানের মাধ্যম বা রুট হিসাবে ব্যবহার করে যেসব দেশে এদের খাওয়া হয় বা ব্যবহার করা হয় সেসব দেশে পাচার করা হচ্ছে। সবেচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে মিষ্টিপানির কচ্ছপ। গত আটমাসে ৩৩১টি বিভিন্ন প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। ভারতের বাজারে এ কচ্ছপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।এছাড়া পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ৮২ শতাংশ হলো চিত্রা ও মায়া হরিণ। এ দ্ইু প্রজাতির হরিণ কোনটিই বিপন্ন না হলেও অতিরিক্ত মাত্রায় পাচারের কারণে বাঘ রক্ষায় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাঘের পছন্দের খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো হরিণ। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে মহাবিপন্ন চাইনিজ বনরুই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।পাচারের রুট: ওয়ার্ল্ডলাইফ কনজারভেশনের তথ্য অনুযায়ী বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে ঢাকা পর্যন্ত পোষা প্রাণী ধনেশ. ময়না, টিয়া ও ভাল্লুকের বাজার রয়েছে। বনরুইয়ের আঁশ এবং বন্য বিড়ালের চামড়া ও হাড়ের আন্তর্জাতিক চোরাচালানের পাচার রুট বান্দরবান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটের মৌলভীবাজার, ভারতের আসাম, মেঘালয় এবং পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত মিষ্টি পানির কচ্ছপ পাচার হয়ে সবেচেয়ে বেশি। এসব এলাকায় কচ্ছপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া সাগরপথে টেকনাফ থেকে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে হাঙ্গরের পাখনা পাচার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।


জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী  ঢাকা প্রেস  কে  জানান, বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পাচার হওয়া বন্যপ্রাণীর সংখ্যা খুবই কম। তবে পার্বত্য এলাকা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বনাঞ্চলে থাকা বিভিন্ন প্রাণী দেশের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পাচার হয়।


অনেকে আবার বাসায় পোষার জন্য বিভিন্ন বনপ্রাণী সংগ্রহ করে থাকে। যেমন, ময়না, টিয়া, রাজ ধনেশ বাসায় পোষতে সংগ্রহ করা হয়। কিছু প্রাণী রয়েছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ খাবার হিসাবে সংগ্রহ করে। মিষ্টি পানির কচ্ছপের বাজার রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। তক্ষক পাচার প্রসঙ্গে বন কর্মকর্তা ছানা উল্যা জানান, তক্ষক কোটি টাকায় বেচাকেনা হয় এ কথার কোন ভিত্তি নেই। তক্ষকের দুই টাকারও বাজারমূল্য নেই। এক শ্রেণির প্রতারক তক্ষকের কথা বলে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়। প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অনেকে আর্থিকবাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।