পুঠিয়া ভ্রমন

প্রকাশকালঃ ১৪ জুন ২০২৩ ০২:৩৬ অপরাহ্ণ ১৮০ বার পঠিত
পুঠিয়া ভ্রমন

রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে মন্দিরের এক শহরের নাম পুঠিয়া। রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ির বিশাল চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া প্রাচীন মন্দির। এ ছাড়াও আছে রাজবাড়ি, পুকুর-দিঘিসহ বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপনা। এ ছাড়া পুঠিয়ার কাছেই আছে বিশাল এক আমের বাজার বানেশ্বর। এই সময়ে তাই বেড়িয়ে আসতে পারেন পুঠিয়া থেকে।


শিব মন্দির
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক থেকে কিছুটা ভেতরের দিকে সুন্দর একটি মন্দির। পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রবেশপথে পুকুর পাড়ে বড় আকৃতির এ মন্দিরটির নাম পুঠিয়া শিব মন্দির। পুঠিয়ার রানি ভুবন মোহিনী দেবী ১৮২৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সবদিকে ৬৫ ফুট দীর্ঘ শিব মন্দিরটি একটি উঁচু ভিতের উপরে নির্মিত এবং এর চার কোনায় চারটি আর কেন্দ্রে একটি রত্ন আছে। মন্দিরের দোতলায় একটি কক্ষ এবং কক্ষের চারপাশে দুই স্তরে বারান্দা বিদ্যমান। মূল কক্ষের অভ্যন্তরে অধিষ্ঠিত আছে কষ্টি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গ। পুরো মন্দিরের দেয়াল পৌরণিক কাহিনি চিত্র খচিত। এর লাগোয়া পূর্ব পাশে গোল গম্বুজ আকৃতির আরেকটি ছোট মন্দির আছে।  

দোলমঞ্চ
শিব মন্দির ছাড়িয়ে একটু দক্ষিণে গেলেই চোখে পড়বে চারতলাবিশিষ্ট দোলমন্দির। দোলমঞ্চের আকারে মন্দিরটি ধাপে ধাপে ওপরে উঠে গেছে। চতুর্থ তলার ওপরে আছে গম্বুজাকৃতির চূড়া। প্রত্যেক তলার চারপাশে আছে টানা বারান্দা। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষ দশকে পুঠিয়ার রানি হেমন্ত কুমারী দেবী এ মন্দির নির্মাণ করেন।   


পুঠিয়া রাজবাড়ি
দোলমঞ্চের সামনে ঘাসে ঢাকা বিশাল মাঠ। দক্ষিণ প্রান্তে মুখোমুখি ঠায় দাঁড়িয়ে ধ্বংসের প্রহর গুনছে বিশাল একটি স্থাপনা। ইট থেকে পলেস্তরা খসে যাওয়া এ প্রাসাদটি নিজের বয়সের জানান দিবে সবাইকে। এটিই বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ি। রানি হেমন্তকুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানি শরত্সুন্দরী দেবীর সম্মানার্থে ১৮৯৫ সালে নির্মাণ করেন এ রাজবাড়ি। বর্তমানে লস্করপুর ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এ ভবনটি। ভবনের পূর্ব পাশে আছে রানি পুকুর। রাজবাড়ির সম্ভ্রান্ত মহিলাদের গোসলের জন্য রানি পুকুরের দেয়াল ঘেরা সান বাঁধানো ঘাটের অস্তিত্ব এখনও বিদ্যমান।

গোবিন্দ মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ির প্রাচীরের ভেতরে পোড়ামাটির অলঙ্করণে সমৃদ্ধ একটি মন্দির। বর্গাকারে নির্মিত এ মন্দিরের প্রত্যেক পাশের দৈর্ঘ্য ১৪.৬ মিটার। কেন্দ্রীয় কক্ষ ছাড়াও মন্দিরটির চারপাশে বর্গাকার চারটি কক্ষ আছে। মন্দিরটি ২৫০ বছরের পুরোনো বলে প্রচলিত থাকলেও এর গায়ে চিত্র ফলক দেখে ধারণা করা হয় যে এটি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। এ মন্দিরের দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাইরে অলঙ্করণসমৃদ্ধ ছোট আরেকটি মন্দিরও রয়েছে।

বড় আহ্নিক মন্দির
পুঠিয়া রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে দিঘি। তার পশ্চিম তীরেই রয়েছে পূর্বমুখী বড় আহ্নিক মন্দির। কারুকার্যমণ্ডিত এ মন্দিরের নির্মাণ শৈলী বেশ আকর্ষণীয়।


গোপাল মন্দির
বড় আহ্নিক মন্দিরের পাশে দক্ষিণমুখী অবস্থানে আছে গোপাল মন্দির। ১৬.৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.৪৭ মিটার প্রস্থের এ মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৮ মিটার।

বানেশ্বর আমের হাট
পুঠিয়া থেকে রাজশাহীর দিকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বানেশ্বরে মহাসড়ক ও আশপাশের এলাকা জুড়ে বসে বিশাল এক বাজার। আমের মৌসুমে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত অবধি চলে এ বাজার। এ ছাড়া শনিবার ও মঙ্গলবার খুব সকালে এখানে বসে বিশাল কলার হাট। সাধারণত বেলা দশটার মধ্যেই এ হাটের লোক সমাগম কমে যায়। 

কীভাবে যাবেন
নিজস্ব গাড়িতে জায়গাটিতে ভ্রমণে গেলে রাজশাহী শহরের প্রায় ৩০ কিলোমিটার আগে পড়বে জায়গাটি। এ ছাড়া রাজশাহীগামী যেকোনো বাসে গিয়েও পুঠিয়া নামা যায়। আবার রাজশাহী থেকে লোকাল বাসে পুঠিয়া আসতে সময় লাগে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। রাজশাহী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে নাটোরগামী বাসে চড়ে পুঠিয়া নামা যায়।  

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়। এ পথে দেশ ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রিন লাইনের এসি বাসে ভাড়া ১,০০০-১৫০০ টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল ট্রাভেলস, শ্যামলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্রাভেলস প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া ৬০০-৮০০ টাকা।   

কোথায় থাকবেন
পুঠিয়া ভ্রমণে গেলে রাত যাপন করার জন্য রাজশাহীই উত্তম। এ শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে।  রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, রাজশাহী কলেজের সামনে রেড ক্যাসল, সাহেব বাজারে হোটেল নাইস, সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুরমোড় রেল গেটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, শিরোইলে হকস্ ইন ইত্যাদি।