যশ ও খ্যাতির নেশা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে

প্রকাশকালঃ ২১ আগu ২০২৩ ০৬:৫১ অপরাহ্ণ ১৭১ বার পঠিত
যশ ও খ্যাতির নেশা মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে

শ ও খ্যাতির নেশা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মানুষের প্রশংসাপ্রীতি নেক-আমলকে মূল্যহীন করে। এ জন্য কখনো কারো প্রশংসার কাঙাল হওয়া উচিত নয়, সব ধরনের নেক-আমল করা উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কেউ সামনাসামনি প্রশংসা করলে তাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।

মানুষের প্রশংসা অনেক সময় মানুষের অন্তরে অহংকারে বিষবৃক্ষ রোপণ করে দেয়, যা ঈমানদারের ভয়ংকর শত্রু। এ জন্য হয়তো নবীজি (সা.) সামনে প্রশংসাকারীর মুখে মাটি নিক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। হাম্মাম (রা.) বলেন, একবার এক ব্যক্তি এসে উসমান (রা.)-এর সামনে তার প্রশংসা শুরু করলে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) মাটি তুলে নিয়ে তার মুখমণ্ডলে ছুড়ে মারলেন এবং বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাটুকারদের সাক্ষাৎ পেলে তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০৮)

কাউকে সামনাসামনি প্রশংসা করে অহংকারী করে তোলা তাকে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজ।


এর মাধ্যমে তার ঈমানি চেতনাকে হত্যা করা হয়। তার মুখলিস সত্তাকে হত্যা করা হয়। ফলে তার কাজগুলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়ে মানুষের পাত্তা পাওয়ার জন্য হয়ে যায়, যা সওয়াবকে ধ্বংস করে দেয়। এ জন্য সাহাবায়ে কেরামের সামনে এ ধরনের কাজ হলে তারা তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ করতেন।

ইবরাহিম আত-তাইমি (রহ.) বলেন, আমরা ওমর (রা.)-এর কাছে উপবিষ্ট ছিলাম। এক ব্যক্তি অন্য  ব্যক্তির উপস্থিত প্রশংসা করলে ওমর (রা.) বলেন, ‘তুমি তো লোকটিকে হত্যা করলে। আল্লাহ তোমার সর্বনাশ করুন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৩৫)


এটা শুধু ওমর (রা.)—এর কথা নয়; বরং এটা নবীজি (সা.)-এরই কথা। নবীজি (সা.) কারো সামনাসামনি প্রশংসা করাকে তাকে গলা কেটে হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)-এর সম্মুখে এক ব্যক্তির আলোচনা হলো। তখন এক লোক তার খুব প্রশংসা করল। নবী (সা.) বলেন, আফসোস তোমার জন্য! তুমি তো তোমার সঙ্গীর গলা কেটে ফেললে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। তারপর তিনি বলেন, যদি কারো প্রশংসা করতেই হয়, তবে সে যেন বলে, আমি তার ব্যাপারে এমন, এমন ধারণা পোষণ করি, যদি তার এরূপ হওয়ার কথা মনে করা হয়। তার প্রকৃত হিসাব গ্রহণকারী হলেন আল্লাহ, আর আল্লাহর তুলনায় কেউ কারো পবিত্রতা বর্ণনা করবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬০৬১)


এ তো গেল কোনো বিষয়ে অবদান রাখার পর কেউ মুখের ওপর প্রশংসা করতে চাইলে তার কথা। কেউ কেউ আছে, কোনো অবদান না রেখেই চালাকি করে অন্যের অবদান বা কৃত্রিত্ব ছিনতাই করে প্রশংসা পেতে চায়। এ ধরনের প্রবণতা আরো বেশি ভয়ংকর। এ ধরনের লোক রাসুল (সা.)-এর যুগেও ছিল, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করে সতর্ক করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা এসব লোককে আজাব থেকে সুরক্ষিত মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত এবং এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে চায় মূলত যা তারা করেনি, তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৮)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.)-এর যুগে তিনি যখন যুদ্ধে বের হতেন, তখন কিছুসংখ্যক মুনাফিক ঘরে বসে থাকত এবং রাসুল (সা.) বেরিয়ে যাওয়ার পর বসে থাকতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করত। এরপর রাসুল (সা.) ফিরে এলে তাঁর কাছে শপথ করে ওজর পেশ করত এবং যে কাজ করেনি সে কাজের জন্য প্রশংসিত হতে পছন্দ করত। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৬৭)

অতএব মুমিনের উচিত, কোনোভাবে প্রশংসার কাঙাল না হওয়া, কেউ অতি প্রশংসা করতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেওয়া। অন্যের কৃত্রিত্ব ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত না হওয়া। সব কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করলে মহান আল্লাহ বহু গুণে এর প্রতিদান দেবেন। আর মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর আশায় যত বড় কাজই করা হোক, আল্লাহর কাছে এর কোনো মূল্য নেই। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন