সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নতুন নির্দেশনা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৫৮ অপরাহ্ণ   |   ২৬ বার পঠিত
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নতুন নির্দেশনা

কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলের সেন্টমার্টিন দ্বীপের নাজুক পরিবেশ ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। বুধবার (২২ অক্টোবর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পরিবেশ–২ শাখা থেকে ১২ দফা নির্দেশনা সংবলিত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়।
 

সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নির্দেশিকা, ২০২৩’-এর আলোকে এই নির্দেশনাগুলো কার্যকর হবে। উদ্দেশ্য—দ্বীপের ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করে দায়িত্বশীল ও টেকসই পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
 

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ–পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো নৌযানকে সেন্টমার্টিনগামী লাইসেন্স দিতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনুমোদিত ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি টিকিটে থাকবে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড, যা ছাড়া টিকিট অবৈধ বলে গণ্য হবে।
 

দ্বীপে ভ্রমণের সময়ও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

  • নভেম্বর মাসে কেবল দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকবে, রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ।

  • ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সীমিত সংখ্যক পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

  • ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
    এছাড়া, প্রতিদিন গড়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক দ্বীপে প্রবেশ করতে পারবেন।

     

দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ আয়োজন বা কেয়া বনে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া ও শামুক–ঝিনুকসহ যেকোনো জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ সব ধরনের মোটরচালিত যান চলাচলও নিষিদ্ধ।
 

দ্বীপে পলিথিন বহন করা যাবে না, এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, ছোট প্যাকেটের সাবান–শ্যাম্পু, ও বোতলজাত পানি (৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটার) বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
 

সরকারের প্রত্যাশা, এসব নির্দেশনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা পাবে এবং দ্বীপটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের আদর্শ মডেল হিসেবে গড়ে উঠবে।
 

উল্লেখ্য, সেন্টমার্টিনে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ বাস্তবায়ন বিষয়ে এক সভা আজ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন এবং ই–টিকেটিং ব্যবস্থাপনা সংস্থার প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।