নাটোর প্রতিনিধিঃ-
শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত চলনবিল অঞ্চলে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। মাঠের পর মাঠ জুড়ে এখন শুধুই সোনালী শীষের ঝলক। হিমেল বাতাস আর মিষ্টি রোদে দোল খাচ্ছে ধানের শীষ—এই দৃশ্য যেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সৌন্দর্যের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।
চলনবিলের বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে চোখ মেললেই দেখা যায় সবুজ স্বপ্নে ভরা কৃষকের মুখ। এবছর ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত তারা। নাটোরের সিংড়া উপজেলাসহ চলনবিল অধ্যুষিত এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াই এখন পুরোদমে চলছে। কৃষক পরিবারগুলোর সদস্যরাও এই কাজে অংশ নিচ্ছেন—বৃদ্ধ, নারী, শিশু সবাই মিলে ধান তোলার উৎসবে যেন মেতে উঠেছেন।
সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ জানান, চলতি মৌসুমে ৩৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগ-পোকামাকড়ের প্রভাব না থাকায় ফলন খুবই ভালো হয়েছে। একইসাথে বাজারে ধানের দামও ভালো থাকায় কৃষকরা এবার লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ধান কাটার কাজে সহায়তা করতে আশেপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক সিংড়ায় এসেছেন। পাশাপাশি হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহারও বেড়েছে। এতে করে ধান কাটার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে।
ডাহিয়া গ্রামের কৃষক কালাম বলেন, "অন্য বছরের তুলনায় এবার ফলন বেশি। কিছু জমির ধান বাতাসে পড়ে গেলেও, শ্রমিক পাওয়ার পর আমরা ঠিকভাবে কেটে ঘরে তুলতে পেরেছি।"
সাঁতপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক বাহার মোল্লা, কাফি ও সিদ্দিক হোসেন জানান, “চাষে যে খরচ হয়েছে, এবার তার চেয়েও বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পেরেছি। গত বছরের তুলনায় এবার আমরা ভালোই লাভ করেছি।”
তাজপুরের শহরবাড়ি গ্রামের কৃষক আমিন আলী ৬০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। এরমধ্যে ইতোমধ্যে ১৩ বিঘার ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। তিনি বলেন, "ফলন যেমন ভালো, তেমনি দামও বেশ ভালো। বৃষ্টির পরও ধানে কোনো ক্ষতি হয়নি। সব ঠিকঠাক চললে এবার আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।"
পাবনা থেকে আসা শ্রমিক রহিম বলেন, "এবার ধান যেমন বেশি, দামও বেশি। আমরা যেটুকু ধান পাই তা দিয়েই পরিবারের সারা বছরের খোরাকি মেটানো সম্ভব।"
ধান ব্যবসায়ী আঃ মতিন মৃধা জানান, “মিনিকেট ধান ১৫০০ টাকা মণে কিনছি। কৃষকরা এবার শুরুতেই ন্যায্য দাম পাচ্ছে।”
ফসলের ফলন ও দামে খুশির হাওয়া বইছে চলনবিলের কৃষকপাড়ায়। মাঠে এখন শুধু সোনালি স্বপ্নের দোল, আর কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক।