ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
গতকাল ২২ নভেম্বর শুক্রবার কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জের হাজিরমোর নতুন স্লুইস গেটে বিকাল ৩ টায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের উদ্যোগে 'কৃষক সমাবেশের আয়োজন' করা হয়। সমাবেশে তাদের দাবি ছিল ৩টি দুধকুমার নদের তীর সংরক্ষণ দ্রুত বাস্তবায়ন,হাট-ঘাটের খাজনা বাতিল ও স্বাধীন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা।
জানা যায়, গণকমিটির আন্দোলনের ফলে গত কয়েক বছর ধরে দুধকুমার নদের ভাঙ্গন প্রতিরোধে তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ২০২৫ সালের জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা দ্রুত শেষ করার তাগিদ কতৃপক্ষের ।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার প্রচার সমন্বয়ক মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য-নাহিদ হাসান নলেজ।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আপনাদের সন্তানেরা দেশে ৭১ লড়াইয়ের মত আর একটা লড়াই করেছে। যে লড়াইটা কেবল তারা একটা সরকারের পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। তারা বলেছে সরকারকে যেতে হবে হাসিনাকে যেতে হবে। এবং আর যেন কোনো হাসিনা তৈরি না হয়। সেজন্য শ্বৈরাতন্ত্রের পিলার বদলায় দিতে হবে। শ্বৈরাতন্ত্রের পিলার হচ্ছে দেশের সংবিধান,আইন,সংসদ,আদালত।"
তিনি আরো বলেন,আপনারা চেয়েছেন পাকিস্তানিরা যাবে, তারা গেছে। বাংলাদেশ হয়েছে। কিন্তু এই ভূ-খন্ডে প্রত্যেকবার শাসক গেছে কিন্তু আইন পরিবর্তন হয় নাই। ৫৩ বছর গেছে আইন বদলায় নাই। এবার তা বদলাতে হবে। ওরা সংসদে বসে টাকা চুরির আইন করবে আর বলবে, হ্যা জয়যুক্ত হয়েছে তা হবে না। জনগণকে প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে। আপনারা যদি আওয়াজ তোলেন, আপনার পক্ষে আইন চান,তাহলে তাহলে এ সরকারকে দিয়েই আইন করে নিবো। যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেই লড়াই চালু রাখতে হবে। আপনাদের জয় অনিবার্য যদি আপনারা লড়াই করেন।"
হাট-ঘাটের খাজনা বাতিলের বিষয়ে নাহিদ হাসান নলেজ তাঁর বক্তব্য বলেন, জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে ১৯৫০ সালে। জমিদাররা সরকারের কাছে জমি ইজারা নিত আর আমরা কৃষকরা তাদের কাছে খাজনা দিয়ে জমি আবাদ করতাম। এখনও হাট ও ঘাট সরকারের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয় আর আমরা ইজারাদারদের খাজনা দিয়ে হাটে সদাই বেচা-কিনা করি,নদ-নদীতে নৌকা চালাই,যাত্রীরা খাজনা দেই। কিন্তু হাট ও ঘাট থেকে জমিদারী নিয়ম বাতিল না হওয়ায় সরাসরি সরকারকে হাট ও ঘাটের খাজনা দিতে পারি না। সড়কে গাড়ি চালাতে খাজনা দিতে হয় না, অথচ সড়ক মেরামতে সরকারকে খরচ করতে হলে নদনদীতে সরকারের কোনও খরচ নেই। তবুও নদনদীতে কেন খাজনা দিব? মুক্তিযুদ্ধের পরপরই হাট ইজারাদারি তুলে দেওয়া হয়েছিল। ২/৩ বছর জনগণ নিজেদের হাট নিজেরা পরিচালনা করেছে। হাট কমিটি হাট পরিচালনা করায় খাজনা তেমন ছিল না। তারপর আবারও বৃটিশের ইজারাদারি প্রথা চালু হয়। ৫৩ বছর ধরে লীগ,বিএনপি,জাতীয় পার্টি ও জামাত এই ইজারাদারি প্রথার সুবিদা ভোগ করছে। তারাই হয়ে উঠেছে নতুন জমিদার। তাই তারা কেউ হাট-ঘাটের ইজারা তুলে দেওয়ার পক্ষে কথা বলবে না। ১৭৬৩ সালের ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহ থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে ২৪'র গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত আমরা এই ইজারাদারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের শহীদেরা কি এই জন্য জিবন দান করেছেন!"
স্থানীয় সরকারকে নিয়ে আরিফুর ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ৭২ এর সংবিধানে স্থানীয় সরকার বলতে কিছু নেই। স্থানীয় সরকারের বদলে 'স্থানীয় শাসন' লেখা আছে। মানে কেন্দ্র ঢাকার প্রতিনিধিরা আমাদের শাসন করছে। আমাদের জেলা ও উপজেলা কেমন করে গড়ে তুলব তা ঠিক করে দেয় এমপি-ডিসিরা। অথচ এমপিদের কাজ ছিল আইন প্রণয়ন করা আর ডিসি-এমপিরা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অধীনে পরিচালিত হওয়ার। কথা ছিল,প্রতিটি জেলা থেকে ভ্যাট বাবদ প্রতিবছর গড়ে যে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঢাকায় জমা হয়, তা জেলার টাকা জেলায় ফেরত আসার। প্রতিবছর ১৫ হাজার কোটি টাকা ফেরত এলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকায় ১শটি ১শ কোটি টাকার কারখানা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তখন কুড়িগ্রাম জেলাকেই ইউরোপের মত উন্নত করা সম্ভব। অন্যদিকে স্থানীয় সরকারের অধীনে ডিসি ও এসপিরা থাকলে আর স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের যেকোন সময় জনগণ দ্বারা অপসারণের ক্ষমতা থাকলে জনগণের উপর আমলা ও পুলিশেরা দাপট দেখাতে পারতো না। ইউরোপ-আমেরিকার মত জনগণকেই অফিসাররা স্যার বলে সম্বোধন করতো। -এই জন্যই তো মুক্তিযুদ্ধে ও গণঅভ্যুত্থানে জীবন দান করেছি।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন, ন্যায়পাল,জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য-এডভোকেট রায়হান কবীর,জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য-কনক রহমান এবং কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সহ - সমন্বয়ক শাহ মোমেন রিপন প্রমূখ।